বাড়ি যাচ্ছেন বলে উনি খুব আনন্দিত। হাসছেন, কথা বলছেন। আমাদের আশীর্বাদও করেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার আগে এমনটাই জানালেন চিকিৎসকরা। সাংবাদিক সম্মেলন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু স্থান পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়িতেও হাসপাতালের মতোই কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাড়িতে ২৪ ঘণ্টা নার্সরা থাকবেন। আগামী এক মাস উডল্যান্ডস হোম কেয়ারের অধীনে থাকবেন তিনি। প্রতিদিন চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে আসবেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার আপডেট নেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাইলস টিউব নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন
হোম কেয়ারে আলাদা কী হচ্ছে? এর উত্তরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেভাবে কিছু হচ্ছে না। হাসপাতালে যেভাবে আছেন, সেভাবেই ব্যবস্থা করা হবে। এমনিতেই বুদ্ধদেবের বাড়িতে হাসপাতালের মতো বেড রয়েছে। সেটাই ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া নেবুলাইজেশন, বাইপ্যাপের ব্যবস্থা থাকবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাইলস টিউব নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন বুদ্ধদেব। আপাতত তাঁকে তরল খাবার খাওয়ানো হবে। হাসপাতালে তিনি যেভাবে খাওয়াদাওয়া করেন, নার্সরা সেভাবেই খাওয়াবেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বুদ্ধদেবকে সুস্থ করে তোলা তাঁদের কাছে নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ওনাকে আমরা চিনি। এই নিয়ে চতূর্থবার এলেন। তাই রোগী হিসাবে তাঁকে আমাদের চেনা। গত ৪ বারের মধ্যে এবারেই তিনি সবচেয়ে দ্রুত সাড়া দিয়েছেন। উনি মানসিকভাবেও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন। এর ফলে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজও কিছুটা সহজ হয়ে যায়।
এখন বুদ্ধবাবু ঠিক কেমন আছেন?
চিকিৎসকরা জানালেন, উনি খুবই আনন্দিত যে আজ বাড়ি যাচ্ছেন। সবাইকে আশীর্বাদ করলেন। বাড়ি যাচ্ছেন বলে হাসছেন, আনন্দে আছেন।
তবে এর পরেই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন, এটা শুধু স্থান পরিবর্তন হল। উডল্যান্ডস হোম কেয়ার সার্ভিসের মধ্যেই থাকবেন তিনি।
বাইপ্যাপ থাকছে
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে বুদ্ধদেবের বাইপ্যাপ লাগবে না। আপাতত হাসপাতালে ইন্টারমিটেন বাইপ্যাপ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। বাড়িতেও তাই করা হবে। শুধু রাতে এক টানা বাইপ্যাপ থাকবে।
গত ২৯ জুলাই ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সংকটজনক অবস্থায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে ভর্তি করা হয়। কড়া অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে তাঁর ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিৎসা করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের চিকিৎসায় দ্রুত ভাল সারা দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
গত সপ্তাহে সোমবার তাঁকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হয়। তারপর তাঁকে নন-ইনভেসিভ বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয়। সেদিনই দুপুরে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। মেডিকেল টিমের সদস্যদের সঙ্গে চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগের থেকে শারীরিক অবস্থা ভাল হয়েছে। তাঁকে দেখে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হাত নাড়েন, সাড়া দেন বলে জানান।
মোট পাঁচ দিনের অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ দেওয়া হয় তাঁকে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ফুসফুসের সংক্রমণ রোধের জন্য় কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। তাতেই কাজ হয়েছে। কিন্তু কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিকের একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এর ফলে কিডনিতে প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। ক্রিয়েটনিনি রিপোর্ট প্রথমে ভাল আসেনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। তবে আপাতত তা আগের চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে।