সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি কেনাবেচায় বাড়ছে প্রতারণা ও আইনি জটিলতা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পরিবহন দফতর ক্রেতাদের উদ্দেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। সরকারের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ, তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) ডিলারের কাছ থেকে গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করতে হবে যে, ওই ডিলারের বৈধ লাইসেন্স আছে কি না।
অভিযোগ বাড়ছে
পরিবহন দফতর জানিয়েছে, সম্প্রতি বহু মানুষ অভিযোগ করেছেন যে, তারা গাড়ি বিক্রি করার পরও বিভিন্ন ট্রাফিক লঙ্ঘনের নোটিশ পাচ্ছেন। তদন্তে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়নি। এমনকি ক'য়েকজন প্রাক্তন মালিক বিহার পুলিশের কাছ থেকেও নোটিশ পেয়েছেন, যেখানে অভিযোগ ছিল যে তাঁদের পুরোনো গাড়ি অবৈধ মদ পাচারের কাজে ব্যবহার হয়েছে। কলকাতার পুরোনো গাড়ি বাজার থেকে বিক্রি হওয়া গাড়ির বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে।
লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা
একটি প্রাথমিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, কলকাতা এবং আশেপাশের এলাকায় অনেক এজেন্ট লাইসেন্স ছাড়াই সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসা করছেন। আরও বিপজ্জনক হল, এরা প্রায়শই বাধ্যতামূলক মালিকানা হস্তান্তরের নিয়ম মানেন না। ফলে নতুন ক্রেতা ও প্রাক্তন মালিক উভয়েই আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছেন।
লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া
পরিবহন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, বৈধ লাইসেন্স ছাড়া সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি বিক্রির অনুমতি নেই। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয় আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিকের কাছে।
যা যা যাচাই করা হয়
বৈধ ট্রেড লাইসেন্স
আবেদনকারীর আইনগত অবস্থা (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান)
অফিস ও পার্কিং লটের পরিমাপ
কর্মীর সংখ্যা
গাড়ি লেনদেনের জন্য একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির রেফারেন্স
মালিকানা বদলের খরচ
গাড়ির ধরন ও বয়স অনুযায়ী মালিকানা বদলের খরচ আলাদা
দু-চাকার গাড়ি: ৬০০-৮০০
গাড়ি: ১,৫০০-৫,০০০
এই টাকা সরাসরি আঞ্চলিক পরিবহন দফতরে জমা দিতে হয়।
পুলিশের অসুবিধা
লাইসেন্সবিহীন ডিলারের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রির ফলে পুলিশ তদন্তে সমস্যায় পড়ছে। যথাযথ নথি না থাকায় অপরাধীদের চিহ্নিত করা যায় না। অনেক প্রাক্তন বিক্রেতা এমনকি গাড়ি বিক্রির বিষয়টিই অস্বীকার করেন।
অনলাইন চুক্তির ঝুঁকি
পরিবহন দফতর আরও জানিয়েছে, অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্রেতা ও বিক্রেতারা সঠিক নিয়ম জানেন না। ফলে মালিকানা বদল সম্পূর্ণ হয় না এবং উভয় পক্ষই অপ্রত্যাশিত ঝুঁকিতে পড়ে যান।
সরকারের বার্তা
ক্রেতাদের প্রতি সরকারের আবেদন স্পষ্ট, সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই ডিলারের বৈধ লাইসেন্স পরীক্ষা করুন। সামান্য অতিরিক্ত খরচ করেও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের মাধ্যমে লেনদেন করা অনেক নিরাপদ, কারণ এতে ভবিষ্যতের আইনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব।