রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল আদালত। এবার রাম নবমীর অশান্তি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর দিনাজপুরে অশান্তির ঘটনায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, বুধবারের মধ্যে ওই রিপোর্ট এবং সিসিক্যামেরার ফুটেজ আদালতে জমা দিতে হবে।
রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তি নিয়ে জল গড়িয়েছে আদালতে। হাইকোর্ট এদিন নির্দেশ দিয়েছে , ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।হাওড়া, হুগলি ও উত্তর দিনাজপুরে গোলমালের ব্যাপারে ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। আদালতের আরও নির্দেশ, সিসিটিভির (CCTV) এবং অন্যান্য সমস্ত ভিডিয়ো ফুটেজ (Footage) আদালতে জমা করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলা হল পুলিশকে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে দিকেএ নজর রাখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
এর আগেই হাওড়ার শিবপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। তার জের কাটতে না কাটতেই রবিবার রাতে একই ইস্যুতে গোলমাল হয় হুগলির রিষড়ায়। এদিকে হাওড়ায় অশান্তির ঘটনা নিয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)-কে দিয়ে তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন।
হাওড়া-ডালখোলা হিংসার মামলার প্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আইনজীবী সোমবার আদালতে বলেন, 'পুলিশের অনুমতি নিয়ে মিছিল হয়েছিল। ৩০ মার্চের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।' হাওড়া-সংঘর্ষ মামলার শুনানিতে আইনজীবী আরও বলেন, 'মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না'। সোমবার আবেদনকারীর আইনজীবী সৌম্য মজুমদার আদালতে জানান, ৩০ মার্চ হাওড়া এবং ডালখোলা পুলিশের অনুমতি নিয়েই রামনবমীর মিছিল করা হয়েছিল। পরে ওই মিছিল ঘিরে ব্যপক গোলমাল হয়। আইনজীবী জানান, এই ঘটনায় রাজভবন এবং কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। রবিবার হুগলির রিষড়াতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাঁর অভিযোগ, ওই সব এলাকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। এর পর হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেন। সমস্ত ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরার ছবি আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, কোনও নিরীহ মানুষ বিব্রত হচ্ছেন কি না তা পুলিশকে দেখতে হবে। দোকনাপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে বিনা বাধায় খোলা যায় তাও রাজ্যকে দেখতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানানতে চান, বর্তমানে কী পরিস্থিতি সেখানকার? পুলিশ কেন আগে থেকে গোলমালের আঁচ পায়নি।ওই সব ঘটনায় কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালত তাও জানতে চায়। আদালতে এজি জানান, শিবপুরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিছিল শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই মিছিলকারীরা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ। অভিযোগ দায়ের হয়েছে।হাওড়ার ঘটনায় ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরেই প্রধান বিচারপতি বলেন, গতবারও রাম নবমীতে শিবপুরে একই ঘটনা ঘটেছিল। তাহলে পুলিশ এবার অনুমতি দিল কেন? এজি বলেন, আবেদনকারীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে বলা হয়েছিল। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, আমরা ঘটনার এনআইএ তদন্ত চাই। পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এরপর বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে এজি জানান, উপদ্রুত এলাকাগুলিতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি আছে। সওয়াল জবাব শেষে আদালত নির্দেশ দেয়, রাজ্য সরকারকে এই ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যাতে স্বাভাবিক থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৬ এপ্রিল।