'সংসারের জন্য কী করেছ, সারাদিন তো বাড়িতেই থাক। কোনও টেনশন তো নিতে হয় না।' অভিযোগ, এধরণের গঞ্জনা বহু মহিলাকে শুনতে হয়। বহু মহিলার সংসারের জোয়াল ঠেলে কেটে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা। কিন্তু বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাঁরাও স্বোপার্জনকারী। সংসারে তাঁরা দিনরাত যে কাজ করেন, তার মূল্য রয়েছে।
আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে, কোনও মহিলা অফিসে চাকরি বা ব্যবসা করে টাকা রোজগার না করলেও তিনি দিনের যত সময় বাড়ির কাজ করেন,তা পারিশ্রমিক বা বেতন যোগ্য। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ মামলায় রায়ে এমনই মত কলকাতা হাইকোর্টের। নিম্ন আদালতের দেওয়া ক্ষতিপূরণের নির্দেশ বহাল রেখেছে আদালত। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট মনে করে দিয়েছে ২০০৮ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথা। সর্বোচ্চ আদালত ব্যাখা করেছিল, যাঁরা বাড়িতে থাকেন তাঁদের বেকার বলে গণ্য করলে হবে না। প্রত্যেকদিন ১০০ টাকা করে ধার্য্য করতে হবে।
যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে, সেটি ২০০৬ সালের। একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বর্ধমানের বাসিন্দা লুফতা বেগম। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। ছেলে মীর শামিম আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনাল থেকে ক্ষতিপূরণের যথেষ্ট অর্থ তাঁরা পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন মৃতের ছেলে। কারণ যে গাড়িটির দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেই গাড়িটির বিমা করা ছিল। এই মামলারই শুনানিতে বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তা ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা গৃহবধূ তাঁদের বেকার ভাবলে চলবে না। তাঁদের শ্রমের মূল্য তা গণ্য করতে হবে। এরপর হাইকোর্টে ওই বিমা সংস্থাকে ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।