২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যে এসেছিল নারদ ,স্টিং ফুটেজ। তে ১২ তৃণমূল নেতা এবং এক আইপিএস-এর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল। সামনে এসে গেল বাংলার আরও একটি বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু এখনও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এনিয়ে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছে সিবিআই।
অভিযুক্তের তালিকায় আছেন সাংসদ, বিধায়কেরাও। তাই নারদ স্টিং অপারেশনে অর্থ লেনদেনের মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন লোকসভা ও বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি। সেই অনুমতি না-পাওয়ায় চার্জশিট দেওয়া যাচ্ছে না সিবিআই সূত্রে আগেই এই খবর জানা গিয়েছিল। এবার একেবারে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ালো সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, নারদ কাণ্ডে তাদের চার্জশিট তৈরি৷ কিন্তু বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি না মেলায় তা কোনও আদালতে জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়িমসিতেই চার্জশিট জমা দিতে পারছে না সিবিআই। সেই কারণেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে দেরি হচ্ছে বলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগ করলেন সিবিআই আধিকারিকরা৷
যদিও নারদ মামলায় চার্জশিট পেশে গড়িমসির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভ্রতোষ মজুমদার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণনের এজলাসে জানান, বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি চেয়ে কোনও আবেদনই জানায়নি সিবিআই। রাজ্যের অতিরিক্তি অ্যাডভোকেট জেনারেল পাল্টা দাবি করে বলেন, সিবিআই মিথ্যে কথা বলছে৷ এখনও পর্যন্ত বিধানসভার সচিবালয়ে এই ধরনের কোনও চার্জশিট অধ্যক্ষের অনুমোদনের জন্য সিবিআই-এর তরফে জমা পড়েনি৷ বিধানসভার সচিবের লিখিত বয়ানের ভিত্তিতেই এই তথ্য তিনি দিচ্ছেন বলে দাবি করেন অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল৷ বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি চেয়ে কোনও আবেদনই জানায়নি সিবিআই। এই ব্যাপারে সিবিআই-কে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি।
এই মামলা করেছেন কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, এখন চার্জশিট দাখিলের জন্য লোকসভা বা বিধানসভার স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজনই নেই। অমিতাভ চক্রবর্তীর অভিযোগ ছিল, স্পিকারের অনুমতি না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে দীর্ঘদিন নারদ তদন্তে দেরি করা হচ্ছে। জনস্বার্থ মামলাকারী অমিতাভ চক্রবর্তীর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ২০১৭ সালে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও চার্জশিট জমা পড়েনি। তাঁর দাবি, ফৌজদারি মামলায় দুর্নীতি দমন আইনে চার্জশিট দিতে স্পিকারের অনুমতি লাগেনা। প্রভাবশালীরা অভিযুক্ত হওয়ায় মামলাও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। নারদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিও জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগেই নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন মন্ত্রী-সাংসদকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল (যদিও আজতক বাংলা সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। প্রায় চার বছর ধরে নারদ মামলায় অভিযু্ক্ত মন্ত্রী ও সাংসদদের জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা।