রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি করেছে চিকেন পক্স তথা জলবসন্ত। ভাইরাসঘটিত রোগটি প্রাণ কাড়ছে বহু মানুষের। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসছে। স্মল পক্স বা গুটিবসন্তের মতো সাংঘাতিক না হলেও জলবসন্তের সাম্প্রতিক দাপট দেখে চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ। বলা হত, ছোটবেলায় একবার চিকেন পক্স হয়ে গেলে আর হবে না, শরীরে জীবনভরের জন্য তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু গত তিন বছরে ভিজেডভি (ভারিসেলা-জোস্টার ভাইরাস, যা কিনা চিকেন পক্সের জন্য দায়ী) সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
তথ্য বলছে, রাজ্যের একমাত্র সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতাল বেলেঘাটা আইডি’তে ভরতি জলবসন্ত রোগীদের ৯০ শতাংশই আগে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে বেলেঘাটা আইডি-তেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার, ফুলবাগানের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ মাসের এক শিশুর। বেলেঘাটা আইডিতে চিকেন পক্সে সংক্রমণ ও মৃত্যু পরিসংখ্যান চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে। গত ৩ মাসে চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন।
তার মধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
জানুয়ারি মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
ডিসেম্বরে ৩ জন ও নভেম্বরে ১ জনের মৃত্যু হয়।
অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত শুধু বেলেঘাটা আইডিতেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
চিকেনপক্সের লক্ষণ
চিকেনপক্সের প্রাথমিক লক্ষণ হল গা-ভরা ফুসকুড়ি যা চুলকানি। তরল-ভরা ফোস্কা হয় সেইগুলি। ফুসকুড়ি প্রথমে বুকে, পিঠে এবং মুখে দেখা যায় এবং তারপর মুখের ভিতরে, চোখের পাতা বা যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ফোস্কা ছড়িয়ে পড়ার আগে আরও বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
জ্বর
ক্লান্তি
খিদে না পাওয়া
মাথাব্যথা
২০২২-এর ১৯ নভেম্বর, চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল চেতলার এক বাসিন্দার। চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি, মৃত্যু হয় দক্ষিণ কলকাতার হালতুর বাসিন্দা অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৩৭)। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে তাঁকে পয়লা ফেব্রুয়ারি ভর্তি করা হয় বেলেঘাটা আইডিতে। ভর্তির পরদিনই তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করতে হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। বেলেঘাটা আইডি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই বয়স ৩৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্য়ে।
তবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃতেরা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, ডায়বেটিস, হেপাটাইটিস বি-সহ নানা কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন। অন্যদিকে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ৮ মাসের শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জানা গেছে, ৫ দিন আগে তপসিয়ার বাসিন্দা ওই শিশুকে ভর্তি করা হয়। সেদিনই তাকে ICU-তে স্থানান্তর করতে হয়।