বেসরকারি হাসপাতালগুলির যথেচ্ছ বিলে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। চিকিত্সার হাসপাতালের বড় অঙ্কের টাকা মেটাতে গিয়ে সব শেষ হয়ে যায় বহু পরিবারের। বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিলে লাগাম পরাতে আগেই নতুন আইন তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। এ বার সেই আইন সংশোধন করতে বিধানসভায় বিল পেশ করা হবে। আজ অর্থাত্ সোমবার রাজ্যবিধানসভায় ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট সংশোধনী বিল পেশ করা হচ্ছে। আলোচনায় অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আজ ও আগামিকাল এই সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনা করা হবে। দুই দিন আলোচনার পর তা পাশ হবে।
খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালে
মূলত ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট ২০১০-এর যে সংশোধনী খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালে, সেটি এ বার প্রয়োগ হতে চলেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির রেগুলেটরি কমিশনকেও ওই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাতে হাসপাতালগুলিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতাও সরকারের হাতে থাকবে।
ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট সংশোধনী বিল কী?
ক্লিনিক্যাল এসটাবলিশমেন্ট সংশোধনী বিল (Clinical Establishments (Registration and Regulation) Amendment Bill) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত খসড়া আইন, যা বেসরকারি ও সরকার অনুমোদিত সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র—যেমন নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ল্যাব, বেসরকারি হাসপাতাল—এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ, রেজিস্ট্রেশন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটির মূল আইন ছিল Clinical Establishments (Registration and Regulation) Act, 2010, যা কেন্দ্রীয় আইন। সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য হল পূর্ববর্তী আইনের কিছু দুর্বলতা দূর করা, বিশেষ করে রোগীদের স্বার্থরক্ষা, পরিষেবার মান, এবং খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
মূল বিষয়বস্তু (সংশোধনী বিলের কিছু প্রধান দিক)
স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ: বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক কত টাকা কোন পরিষেবার জন্য নিচ্ছে, তা আগে থেকে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে।
রোগী অধিকারের সুরক্ষা: রোগীদের অনুমতি ছাড়া কোনও চিকিৎসা করা যাবে না। অবাঞ্ছিত বিলিং করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্সিং: প্রতিটি ক্লিনিক বা ল্যাবকে রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক। অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদন ও নবায়ন করতে হবে।
মনিটরিং এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: কোনও প্রতিষ্ঠান যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল বা শাস্তি দেওয়া যাবে।
টেকনিশিয়ান ও ডাক্তারদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ: যে কেউ ল্যাব খুলে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে পারবে না। সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
কেন এই সংশোধনী জরুরি?
বহু বেসরকারি ক্লিনিক ও নার্সিংহোম রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আসছিল। প্যাথলজি ল্যাবগুলোর কিছু ক্ষেত্রে ভুল রিপোর্টের কারণে রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
অপ্রশিক্ষিত কর্মীদের দ্বারা সেবাপ্রদান জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে এর আগেও ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার The West Bengal Clinical Establishments (Registration, Regulation and Transparency) Act চালু করেছিল। তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল, বিশেষ করে চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তবে জনস্বার্থে সেটি কার্যকর করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সংশোধনী বিল কার্যকর হলে সেটি রাজ্যগুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে, যদিও স্বাস্থ্য রাজ্যের অধীনে, তাই রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া কেন্দ্রীয় আইন সরাসরি প্রযোজ্য নয়।