বিহারে ৫ আসনে জয়ের পরে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন AIMIM সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ২০০৯ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোট বেশির ভাগই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দিকে গিয়েছে। ২০২১-এর নির্বাচনে হঠাত্ AIMIM-এর প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণায় রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণে বদলের ছায়া দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ হেন পরিস্থিতিতে এবার রাজ্যের মুসলিম ভোট টানতে আসরে নেমে পড়ল বাম-কংগ্রেসও।
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান তড়িঘড়ি ছুটলেন ফুরফুরা শরিফে পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করতে। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে আগে থেকে জানানো সত্ত্বেও মঙ্গলবার অধীর ও মান্নানের আসার সময় ছিলেন না তিনি। বদলে ত্বহার তুতো ভাই ইব্রাহিম সিদ্দিকির সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনা হয় অধীর ও মান্নানের।
ইব্রাহিমের সঙ্গে আলোচনার পর অধীর বলেন, 'বাংলার স্বার্থে বাম-কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ জোট লড়াই করছে। তাই বাংলাকে রক্ষা করার জন্য পিরজাদার কাছে দোয়া চাইলাম।' ইব্রাহিম সিদ্দিকি বলেন, 'সমস্ত দল এক জোট হয়ে লড়াই করতে পারলে তবেই সাম্প্রদায়িক দলকে হঠানো যাবে।'
মুসলিম ভোট টানতে কোনও দলেরই চেষ্টার কসুর থাকে না। মুসলিম ভোট পেলে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যায় পশ্চিমবঙ্গে। বাংলায় মোটামুটি ২৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা। এর মধ্যে খানিকটা অংশও কোনও দল পেলেই মোটামুটি রাজনৈতিক অঙ্ক বদলে যায়। রাজ্য রাজনীতিতে একটু পিছনের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, বাংলায় অঞ্চলভিত্তিক ভাবে মুসলিম ভোট ভাগ হয়। কোনও নির্দিষ্ট দিক নেই। বামেদের সময় দেখা যেত, দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ মুসলিম ভোট যেত বামেদের দিকে। আবার উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের কিছুটা অংশ এবং মুর্শিদাবাদের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল কংগ্রেসকে সমর্থন জুগিয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহে মূলত অবাঙালি ঊর্দুভাষী মুসলিমদের সংখ্যা বেশি। মুর্শিদাবাদের দিকে আবার বাঙালি মুসলমান বেশি। ওই বিস্তীর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে প্রচুর বাংলাদেশি মুসলমানও রয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে সেই ভোটের বেশির ভাগটাই ধীরে ধীরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে চলে যেতে শুরু করে। ২০১১ সাল থেকে নির্বাচনগুলিতে মমতাতেই ভরসা রেখেছে বড় অংশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
ওয়াইসি-র দল ইতিমধ্যেই উত্তর দিনাজপুর ও কলকাতার কিছু এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও পশ্চিমবঙ্গে বিহারের সীমাঞ্চলে যে ভাবে AIMIM প্রার্থী দিয়েছে এবং লাগাতার প্রচার করেছে, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটেও যদি AIMIM প্রার্থী দেয়, তা হলে সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে। উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের যে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে যায়, তাতে থাবা বসাতে পারে AIMIM।