একটানা ৮৫৪১ দিনের মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় সাড়ে ২৩ বছর ধরে সামলেছেন বাংলার দায়িত্ব। সেই জ্যোতি বসুকে নিয়ে এবার বায়োপিক করার উদ্যোগ নিলে তাঁর দল, CPIM। কাকে দেখা যাবে নাম ভূমিকায়? আর কোন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেখা যাবে এই বায়োপিকে? এই নিয়েই bangla.aajtak.in-এ আলোচনায় ঊষশী চক্রবর্তী, বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষরা।
জান গিয়েছে, সম্পূর্ণ পার্টি ফান্ডেই তৈরি হতে চলেছে জ্যোতি বসুর এই বায়োপিক। আগামী বছরের শুরু থেকে আরম্ভ হবে ছবির প্রিপ্রোডাকশনের কাজ। জ্যোতি বসু রিসার্চ সেন্টারের ব্যানারে এই বায়োপিক তৈরি পরিকল্পনা নিয়েছে CPIM। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তিত্বের নানা জানা-অজানা দিক তুলে ধরা হবে এই জীবনীমূলক সিনেমায়।
এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান CPIM নেতা রবীন দেব বলেন, 'জ্যোতি বসু শুধু কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃতই নন, ভারতের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনেরও তিনি একজন কিংবদন্তি ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনপঞ্জি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ফলে জ্যোতি বসুকে নিয়েও এমনই একটা ভাবনা এসেছে আমাদের কাছেও। দল ও জ্যোতি বসু সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত শিল্প-সংস্কৃতি জগতের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্ত পরিকল্পনা এগোবে। এই জগতের বিশেষজ্ঞদের মতামতা চাই আমরা, তাঁরাই বিষয়টিকে সমৃদ্ধ করুক।'
তবে CPIM-এর পক্ষ থেকে যদিও কোনও তারকার নাম প্রকাশ করা হয়নি। ভেসে আসছে কিংবদন্তি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের নাম। ঘনিষ্ট মহলে তিনি জ্যোতি বসুর বায়োপিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে আগ্রহী। যদিও এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি।
bangla.aajtak.in-এ অভিনেত্রী ঊষশী চক্রবর্তী জানালেন, জ্যোতি বসুর বায়োপিকে নাম ভূমিকায় তাঁর কাকে দেখার ইচ্ছে। তিনি বলেন, 'ঋত্ত্বিক চক্রবর্তীকে নাম ভূমিকায় দেখতে পছন্দ করব। তবে কিছু ভালো ভালো মহিলা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও যেন গুরুত্ব দেওয়া হয় বায়োপিকে। যেমন মণিকুন্তলা সেন, ইলা মিত্র। বড় বড় বামপন্থী নেত্রী রয়েছেন, তাঁদের যেন বাদ না দেওয়া হয়। পরবর্তীকালের বৃন্দা কারাটও যেন থাকেন। এছাড়াও হরেকৃষ্ণ কোঙার,প্রোমোদ দাশগুপ্তকেও যেন দেখতে পাই এই বায়োপিকে। চন্দন সেনকে হরেকৃষ্ণ কোঙারের ভূমিকায় দেখতে চাইব। এছাড়াও পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের তো অভিনেতাদের কোনও চরিত্রে দেখা গেলে ভাল লাগবে। নাসিরুদ্দিন শাহ যদি বর্ষীয়ান জ্যোতিবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে তো নাথিং লাইক ইট!'
তবে নাম ভূমিকায় পছন্দসই কোনও অভিনেতাকে এখনই বেছে নিতে পারেননি দেবদূত ঘোষ, বাদশা মৈত্ররা। যদিও তিন অভিনেতাই জ্যোতি বসুর বায়োপিকে কোনও চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ মিললে তা সাদরে গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বাদশা মৈত্রের কথায়, 'খুব ভাল এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নিশ্চয়ই যোগ্য পরিচালকের হাতেই যাবে কাজটি। জ্যোতি বাবু যে মাপের মানুষ বা তাঁর যে পরিচিতি তা গোটা বিশ্বের মানুষ দেখবেন। তবে সমস্ত চরিত্রের নির্বাচন খুব ভেবেচিন্তেই করতে হবে।'
জ্যোতি বসু নিয়ে তো অনেক মিথ রয়েছে। আজকের প্রজন্ম প্রায় কিছুই জানেন না। প্রথম বামপন্থী আন্দোলন যাঁদের হাত ধরে, সেই মানুষগুলির কথা উঠে আসবে। CPIM বলতে আমরা কেবল ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকেই চিনি। কিন্তু যখন উনি রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন, তখন বাম সরকার ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না ভারতে। ত্যাগ করেছিলেন নিজের উজ্জ্বল কেরিয়ার, পারিবারিক স্বচ্ছলতা এবং সুখের-আরামের নিশ্চিত জীবন। আমার মনে হয় জ্যোতি বসুর মূল্যায়ণ সেই সময় থেকে শুরু হওয়া উচিত।'
দেবদূত ঘোষের কথায়, 'থিয়েটার এবং টেলিভিশন ও সিনেমায় যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের মধ্যে থেকে কাস্টিং হোক। কেবলমাত্র বাংলার গণ্ডিতে আটকে থাকার দরকার নেই এক্ষেত্রে। ইন্টারেস্টিং এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।'