'এত বড়! সত্যি?' সালটা ছিল ২০১৫। লাল রঙের ব্যানারে সাদা কালি দিয়ে লেখা এই লাইন দুর্গাপুজোর আগে ছেয়ে গিয়েছিল সর্বত্র। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে সবচেয়ে বড় দুর্গা প্রতিমা গড়ে চমক দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব। যা দেখতে উপচে পড়েছিল জনতার ভিড়। ফলস্বরূপ পঞ্চমীর দুপুরেই পদপিষ্ট পরিস্থিতি। অগত্যা নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ঝাঁপ বন্ধ হয় প্যান্ডেলের। তারপর কেটে গিয়েছে ১০টা বছর। থিমের পথে না হেঁটে, আশপাশে একাধিক সেলেব পুজোর ভিড়ে ঐতিহ্যই বজায় রেখেছে এই পুজো কমিটি। তবে ২০২৫ সালটা অন্যরকম। নস্টালজিয়া উস্কে বড় দুর্গার ১০ বছর পূর্তি আরও বড় চমক আনতে চলেছে এই ক্লাব।
হাতে মেরেকেটে আর ৩ মাস সময়। তারপরই আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠবে আলোকমঞ্জরি... দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় বাঙালিরা। অপেক্ষায় গোটা রাজ্য। কলকাতার বহু বড় পুজোয় ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে খুঁটি পুজো। থিম ভাবনা অনুযায়ী প্যান্ডেল বাঁধার কাজও শুরু হয়েছে। হাইপ্রোফাইল পুজোগুলি প্রচারও শুরু করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তার মধ্যেই এবার বিশেষ ভাবে নজর কাড়ছে দেশপ্রিয় পার্কের পোস্টার। '১০ বছর পর আবার পুজোর ডেস্টিনেশন দেশপ্রিয় পার্ক।' বছর দশেক বাদে বড় দুর্গার মতো আবার কোন বড় চমক আনতে চলেছে তারা?
কী এই নয়া চমক? bangla.aajtak.in-এ ইঙ্গিত দিলেন দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসবের সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার। তিনি বলেন, '৮৮তম বর্ষে আমাদের প্রয়াস ২০১৫ সালের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু এই পুনরাবৃত্তি বড় দুর্গা দিয়ে নয়, অন্য বড় চমকের মাধ্যমে। যা আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হবে।'
৫টা প্যান্ডেলের মতো থিমের পথে না হাঁটলেও ষষ্ঠী থেকে দশমী দর্শকের ভিড়ে অনেক পুজোকেই টেক্কা দেয় দেশপ্রিয় পার্ক। দক্ষিণ কলকাতার পুজো পরিক্রমা মানে এই প্যান্ডেল ঘোরা চাই-ই চাই। কিন্তু ফের বড় দুর্গার মতো বড় চমক হলে কোনও অঘটন ঘটবে না তো? বছর দশের আগের পদপিষ্ট পরিস্থিতির খারাপ স্মৃতি আশঙ্কা তৈরি করছে। এ প্রসঙ্গে আশ্বস্ত করে সুদীপ্ত কুমার বলেন, '১০ বছর আগে যা ঘটেছিল, তা আর হবে না। পুলিশ-প্রশাসনের থেকেও আমরা আশ্বাস পেয়েছি। আমাদের ম্যানেজমেন্টেও কোনও ত্রুটি থাকবে না। সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকেই আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেব।' বছর দশেক আগে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় আগাম বোঝার ক্ষেত্রে ত্রুটি ছিল পুলিশ-প্রশাসনেরও, মানছেন ক্লাব কর্তারা। তাই এবারে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দেশপ্রিয় পার্ক এলাকায় পুজোর সময়ে থাকবে ৭০০ পুলিশ, প্যান্ডেলের ভিতর থাকবেন দুই পুলিশ কর্তা।
থিম নয়, এবারের চমককে বলা হচ্ছে 'বিশেষ কনসেপ্ট'। সুদীপ্ত কুমার বলেন, 'বর্ষাকে মাথায় রেখেই এবার আমরা গোটা বিষয়টিকে সাজিয়েছি। সেপ্টেম্বরের শেষে পুজো, ভরপুর বর্ষা থাকবে, সেরকম ভাবেই প্যান্ডেল তৈরি করা হবে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবে শিশুরা।' মণ্ডপ চত্বরে প্ল্যাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা হবে একটি বিশাল দুর্গামূর্তি। নারীশক্তিকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হবে এবারের পুজোয়। সেলেব চমক নয়, ৪০০ মহিলা নৃত্যনাট্য পরিবেশনের মাধ্যমেই উদ্বোধন করবেন দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর। কনসেপ্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নয়, দেশপ্রিয় পার্কের প্যান্ডেলে দেখা যাবে সাবেকি প্রতিমাই। তৈরি করছেন শিল্পী পরিমল পাল। বর্ষাকে মাথায় রেখে কনসেপ্ট ভাবনাকে শৈল্পিক রূপ দিচ্ছেন রাজু দে। আলোর কারুকার্যেও প্রকাশ পাবে কনসেপ্ট। প্যান্ডেল তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে না কোনও থার্মোকল।
হাই প্রোফাইল পুজোর ভিড়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাজেট নিয়ে ফের বড় চমক দিতে নেমেছে দেশপ্রিয় পার্ক। ভিড়ে টেক্কা দিতে পারবে আশপাশের ত্রিধারা, সুরুচি, চেতলা অগ্রণীকে? অপেক্ষা আর মাস তিনেকের।