কলকাতায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলির মধ্যে পার্ক সার্কাস অন্যতম। এখানে হিন্দু থাকলেও তা সংখ্যায় খুবই কম। কিন্তু তা বলে মাতৃ আরাধনা একেবারেই বন্ধ হয়নি এখানে। গত ৮৪ বছর ধরে পার্ক সার্কাস ময়দানে দুর্গাপুজো হয় মহা সমারোহের সঙ্গে। যেখানে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেই পুজোয় সমানভাবে উপভোগ করতে দেখা যায়। এই বছর ৮৫ বছরে পা দিল পার্ক সার্কাস সার্বজনীন উদ্দীপনী দুর্গোৎসব।
এই পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য গৌরব ধাওয়ান বলেন যে এই বছর এই পুজোর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য। ৮৫ বছরের এই পুজোয় এই বছরের থিম রাজস্থানী মহল, মণ্ডপের অধিকাংশ কাজই সারা হয়ে গিয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গৌরব ধাওয়ান জানান, অন্য বারের মতো আর কুমোরটুলি থেকে মায়ের মূর্তি আসছে না, এই বছর মণ্ডপেই মাকে তৈরি করা হচ্ছে। থিম অনুযায়ী হচ্ছে দেবী দুর্গার সাজসজ্জা। তবে প্রতি বছরই পার্ক সার্কাস ময়দানের এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ থাকে মেলা। এই বছরও ব্যতিক্রম নয়।
বিরাট ময়দান জুড়ে চলে এই মেলা। খাওয়া-দাওয়া থেকে জয় রাইড, ঠাকুর দেখা, আড্ডা মারা সবই হয় এই মেলাতে। এই বছর পুজোতে থাকছে গুজরাতি ঘরানার গরবা। গৌরব ধাওয়ান বলেন, শহরের সবচেয়ে বড় ফুড কোর্ট থাকছে এখানে। ঠাকুর দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এখানে এসে ফ্যানের হাওয়া খেয়ে, বিভিন্ন ধরনের খাবার উপভোগ করতে পারবেন। গত বছরের মতো এই বছরও থাকছে ড্রোন শো। মুসলিম এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এই পুজোতে তাঁদের সমর্থন-সাহায্যই সবচেয়ে বেশি নজরে আসে বলে জানিয়েছেন গৌরব ধাওয়ান।
গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিবেশীরা যেভাবে এই পুজোর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা অভাবনীয়। এই পুজো ঘিরে মুসলিমদের উত্তেজনা কিছু কম থাকে না। তাঁদের সমর্থন পেয়েই পার্ক সার্কাস উদ্দীপনী পুজো আজ মাইস্টোন ছুঁতে পেরেছে, বলে জানান পুজো কমিটির সদস্য। এই পুজোয় লাইন দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই, এত বড় ময়দান যে সকলেই ধীরে সুস্থে পুজো মণ্ডপে ঢুকতে ও বেরোতে পারেন। হিন্দু-মুসলিম সহ সকলেই এই পুজো দেখতে ভিড় জমান। প্রত্যেক ধর্মের মানুষই এই পুজো উপভোগ করেন। অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও উদ্দীপনীর পুজো উদ্বোধন করবেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। উদ্বোধনের পর থেকেই পুজোয় মানুষের ঢল নামতে শুরু করে দেবে।