নয়া ৪ প্রজাতির টিকটিকি আবিষ্কার করলেন এক বাঙালি গবেষক। দেশের উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্যে তিনি এবং তাঁর দল সেগুলি খুঁজে পেয়েছে। এক আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান পত্রিকায় তার আবিষ্কারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই বাঙালি গবেষকের নাম জয়াদিত্য পুরকায়স্থ।
তাঁরা দু'টি দলে কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে একটা ছিল মিজোরামে, আর একটা মেঘালয়ে। জয়াদিত্য পুরকায়স্থ দু'টি দলেই ছিলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ সেগুলির হদিশ মেলে। সম্প্রতি তাঁদের এই সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছে বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা 'জুট্যাক্সা'।
মেঘালয়ে পাওয়া দুই নয়া প্রজাতির টিকটিকির নাম হল কার্স্ট ডোয়েলিং বেন্ট-টোড গেকো এবং আগরওয়ালস বেন্ট-টোড গেকো। যে এলাকা থেকে পাওয়া গিয়েছিল, তার কথা মাথায় রেখে প্রথমটির নামকরণ করা হয়েছে। কার্স্ট মানে চুনাপাথরের এলাকা বলা যেতে পারে।
ওই দু'টি প্রজাতির প্রাণীই দক্ষিণ গারোর সিজু গ্রাম থেকে পাওয়া গিয়েছে। যেখানে প্রচুর চুনাপাথরের গুহা রয়েছে। যার জীববৈচিত্র্যের তুলনা নেই। সরীসৃপের কথা যদি ধরি হয়, তা হলে উত্তর-পূর্বের বাকি অংশের থেকে ওই এলাকায় যেন এখনও অনাবিষ্কৃত।
চুনাপাথর থেকে তৈরি হয় সিমেন্ট। মেঘালয়ের প্রচুর চুনাপাথর রয়েছে। উত্তর-পূর্বের বড় বড় সব সিমেন্ট সংস্থা মেঘালয়ে কাজ করছে। মেঘালয়ে সবথেকে বেশি উত্তোলন করা হয় কয়লা। এরপর রয়েছে চুনাপাথর।
সেখানে ১৪,৯৫৯ মিলিয়ন টন সিমেন্ট তৈরির চুনাপাথর রয়েছে। যা দেশের ৯ শতাংশ। সেখানে বাণিজ্য়িক ভাবে এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চুনাপাথর সংগ্রহের কাজ চলছে।
আর তার ফল হচ্ছে মারাত্মক। কমছে সবুজের পরিমাণ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকৃতির প্রাণী। যেগুলির কথা বিজ্ঞানের কাছে এখনও পর্যন্ত জানাই নেই।
আগরওয়ালস বেন্ট-টোড গেকোর নাম রাখা হয়েছে ঈশান আগরওয়ালের নামে। সরীসৃপবিদ্যায় তাঁর যা অবদান, তাঁকে সম্মান জানাতেই এই নামকরণ।
মিজোরামে যে নয়া প্রজাতির টিকটিকি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির মধ্যে একটির নাম হল আরুন বওয়েরস বেন্ট-টোড গেকো। সেটি পাওয়া গিয়েছে আইজল শহরের আশপাশ থেকে। আর অন্যটির নাম বেঙ্গখুইয়া বেন্ট-টোড গেকো। সেটি আইজল জেলার সাইলাম গ্রাম থেকে পাওয়া গিয়েছে।
আরুন বওয়েরস বেন্ট-টোড গেকোর নাম রাখা হয়েছে আরুন বওয়েরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। তিনি টিকিটিকি বা গেকোর শ্রেণীবিন্যাসে অসাধারণ কাজ করেছেন। অন্যদিকে, বেঙ্গখুইয়া বেন্ট-টোড গেকোর নাম রাখা হয়েছে সাইলাম গ্রামের প্রধানকে সম্মান জানিয়ে।
গবেষকদলে ছিলেন হেল্প আর্থ-এর জয়াদিত্য পুরকায়স্থ, মিডোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এইট টি লালরেমসেঙ্গা, উমরোই মিলিটারি স্টেশনের কর্নেল যশপাল সিং রাঠি। ছিলেন লাল বিয়াকজুয়ালা, এইচ টি ডেসেমসন, লাল মুয়ানসাঙ্গা, মাথিপি ভাবেইরুরেইলাই, সুরজ চৌহান এবং সনৎ বোরা।
জয়াদিত্য পুরকায়স্থ জানান, ওই এলাকায় জীববৈচিত্র দেখে তাক লেগে যাবে। তবে নিয়ম না মেনে উত্তোলন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর মতে, উন্নয়ন তো চলবেই। তবে পরিবেশ সংরক্ষণও জরুরি।