২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। তবে তার মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় পোস্টার-কাণ্ডে অস্বস্তি বেড়েছে পদ্ম শিবিরে। ঢাকুরিয়ায় বিজেপির জেলা কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সোমবার সকালে বেশ কিছু পোস্টার পড়ে, যেখানে লেখা ছিল – “টাকা, গাড়ি, মোবাইল দিন, দক্ষিণ কলকাতায় পদ নিন। যোগাযোগ করুন জেলা সভাপতি এবং জেলা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে।” পোস্টারে স্পষ্টভাবে জেলা সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য এবং সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিং-এর ছবি ছাপা ছিল।
পোস্টার-কাণ্ডে চাঞ্চল্য
প্রাতঃভ্রমণকারীরা মঙ্গলবার সকালে ঢাকুরিয়ার রাস্তায় এই পোস্টারগুলি দেখতে পান। মুহূর্তেই ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। পোস্টারে ইঙ্গিত, বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা ইউনিটে নাকি টাকা, গাড়ি বা মোবাইল দিলেই পদ পাওয়া যায়। এটি মূলত বিজেপির বিক্ষুব্ধ কর্মীদের কাজ বলে মনে করা হচ্ছে।
সংগঠনে ফাটল?
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ ধরনের অভিযোগে বিজেপির অস্বস্তি আরও বেড়েছে। রাজ্যে এখনও দলের সভাপতি নিয়োগ হয়নি। গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে পদ্ম শিবিরের অন্দরেই অস্থিরতা স্পষ্ট। রাজ্য সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বারবার দোলাচলে পড়েছে বিজেপি। ইতিমধ্যে সোমবার দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। তবে এখনও সভাপতি নির্বাচন চূড়ান্ত হয়নি।
টাকার বিনিময়ে পদ বিতরণের অভিযোগ
পোস্টারে নাম থাকা দুই নেতার বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদিও বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, এটি দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিক্ষুব্ধদের ষড়যন্ত্র। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গোষ্ঠী কোন্দল এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সংগঠনের ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিধানসভা নির্বাচনের আর মাত্র দেড় বছর বাকি। তার আগেই এই ধরনের অভিযোগ বিজেপির সংগঠনে ভাঙনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে আসছে। কখনও জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ, কখনও গোষ্ঠী সংঘাত। এবার দক্ষিণ কলকাতায় টাকা নিয়ে পদ কেনাবেচার অভিযোগে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ল।
দলের অবস্থান
বিজেপির একাংশের মতে, এই ঘটনা দলের ভাবমূর্তিকে বড়সড়ভাবে ধাক্কা দিতে পারে। রাজ্যে সংগঠন চাঙ্গা করতে গেলে এই ধরনের ঘটনা রুখতে হবে। ইতিমধ্যে ঘটনাটি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।
নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য এই ধরনের ঘটনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এর প্রভাব ভোটব্যাংকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এই অভিযোগের সঠিক তদন্ত না হয়, তবে দলের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে। ফলে বাংলা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে পদ্ম শিবিরের।
সংবাদদাতা- সুজয় ঘোষ