
রাজ্যজুড়ে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফর্ম বিলি ও জমা নেওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু এই ফর্ম পূরণ করতেই বড় সমস্যায় পড়েছেন কলকাতার সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। এনুমারেশন ফর্ম তাঁরা পেলেও, বিশেষ করে ‘অভিভাবক হিসেবে কার নাম দেব’, এই প্রশ্নে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ না করতে পারলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে চিঠি দিয়ে সমস্যার সমাধান চান। সেই চিঠির ভিত্তিতেই এবার কমিশন সোনাগাছিতে SIR ফর্ম পূরণে সহায়তার জন্য বিশেষ ক্যাম্প খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোনাগাছিতে কমিশন, মিলবে সরাসরি সহায়তা
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ ক্যাম্পে এনরোলমেন্ট অফিসার (ERO) উপস্থিত থাকবেন। যৌনকর্মীরা ফর্ম পূরণের সময় যে সমস্যাগুলির মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলি শুনে সরাসরি সহায়তা করা হবে। কমিশনের বার্তা, যৌনকর্মীরাও ভারতীয় নাগরিক। তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় নিশ্চিতভাবে থাকা উচিত।
২০০২ সালের নথিই বড় বাধা
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, বেশিরভাগ যৌনকর্মীরই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সামাজিক কারণে অনেকেই নিজের পেশা গোপন করেন। ফলে পরিবারের পুরনো নথি বা ২০০২ সালের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জোগাড় করা তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
দুর্বার মহিলা সমিতির সম্পাদক বিশাখা লস্কর বলেন, 'অনেক মেয়েরই কোনও অভিভাবক নেই। বাড়ি ছেড়েছে বহু বছর আগে। ফর্মে অভিভাবকের নাম দেবে কীভাবে, সেটা ভেবেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কমিশন যদি ক্যাম্প করে, আমরা সবরকম সাহায্য করব।'
সরকারি প্রকল্পে নাম থাকলেও কেন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন?
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবা ভাতা সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান সোনাগাছির বহু যৌনকর্মী। তাই তাঁদের প্রশ্ন, 'যখন সরকারি প্রকল্পে আমাদের নাম রয়েছে, তখন ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে আবার নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ কেন?'
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির মতে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অনেকেই ফর্মের প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারছেন না। ফর্ম ঠিকভাবে পূরণ না হলে ভোটার তালিকায় নাম বাদ পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, যা ভোটদানের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল।
কমিশনের উদ্যোগ
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়, সেটাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। ৪ নভেম্বর থেকে SIR ফর্ম বিতরণ শুরু হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া
ইতিমধ্যেই ৪.৫ কোটির বেশি ফর্ম ডিজিটাইজড হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ পাবে খসড়া ভোটার তালিকা তার আগেই সোনাগাছির যৌনকর্মীদের সমস্যার সমাধানে কমিশন বিশেষ ক্যাম্প শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাঁদের আশা, এই উদ্যোগ বহু মানুষের বহুদিনের আতঙ্ক দূর করবে এবং নিশ্চিত করবে তাঁদের ভোটাধিকার।