পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন রাজভবনে কর্মরত এক মহিলা। যে ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও কোনও ধরনের সাহায্য করতে অস্বীকার করেছেন বোস। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকে অবৈধ এবং সংবিধানের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন রাজ্যপাল। সংবিধান রাজ্যপালকে কী রক্ষাকবচ দিয়েছে?
গত বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের কাছে রাজভবনের এক চুক্তিভিত্তিক মহিলা কর্মী অভিযোগ দায়ের করেছেন, রাজভবনে দু'বার তাঁকে শ্লীলতাহানি করেছেন রাজ্যপাল। যদিও গোটা বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন রাজ্যপাল বোস। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। রাজ্যপাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশকে কোনও সহযোগিতা করবেন না। এমনকি রাজভবনে পুলিশ কর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মহিলার অভিযোগের পর এখনও পর্যন্ত কী হয়েছে?
কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়েরের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত করছে এই আট সদস্যের কমিটি। তিনি রাজভবন থেকে ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছিলেন। তা দেওয়া হয়নি। বরং রাজভবন থেকে সংবাদ মাধ্যমের জন্য ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজ্যপাল কী করলেন
রাজ্য পুলিশকে রাজভবন প্রবেশে বারণ করেছেন রাজ্যপাল। এর জন্য সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, তাঁর মেয়াদে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। তদন্তও করা যাবে না।
সংবিধান কি সত্যিই বিশেষ ছাড় দেয়?
ভারতীয় সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল বা কোনও রাজ্যের প্রধানকে নিজের ক্ষমতা অনুশীলন করতে গিয়ে কোনও আদালতের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন না। অনুচ্ছেদের ২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের মেয়াদকালে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা শুরু করা যাবে না। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়াও শুরু করা যাবে না।
পুরনো মামলা হলে কী হবে?
এর আগেও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। যেমন, কংগ্রেস নেতা এনডি তিওয়ারি যখন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল ছিলেন, তখন তাঁর নাম যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ওই সিডিতে এনডি তিওয়ারিকে মহিলাদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। এরপর স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। মেঘালয়ের রাজ্যপাল ভি শানমুগানাথনের বিরুদ্ধেও উঠেছিল যৌন হয়রানির অভিযোগ। তিনিও পদত্যাগ করেছিলেন।
রাজ্যপালের রক্ষাকবচ নিয়ে কী বলছে আদালত?
বিভিন্ন আদালত রাজ্যপালদের রক্ষাকবচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণও প্রণিধানযোগ্য। রামেশ্বর প্রসাদ বনাম বিহার রাজ্য মামলার কথা উঠে এসেছে। রাজ্যপাল হঠাৎ করেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিলেন। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল,রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে ৩৬১ অনুচ্ছেদে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনও অন্যায় করে থাকলেও পদে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না।.
চিরকাল কি রক্ষাকবচ?
রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিরা আজীবন রক্ষাকবচ পান না। যতদিন পদে আছেন ততদিনই তিনি সংবিধান প্রদত্ত রক্ষাকবচ পাবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু হতে পারে। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হতে পারে।
অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত শুরু হতে পারে?
যৌন হয়রানির অভিযোগ বা অন্য কোনও মামলা হলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করা যেতে পারে। যদিও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না বা শাস্তি দেওয়া যাবে না। তবে তদন্তের জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া যেতে পারে। ৩৬১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধানের বিবৃতি তখনই নেওয়া যেতে পারে যখন তা প্রয়োজনীয়। তা-ও এমনভাবে যাতে রাজ্যপালের পদমর্যাদা ক্ষুন্ন না হয়।