দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও রবিবার (২৯ মে) বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু হল। এদিন সকাল ৭টা ১০-নাগাদ কলকাতা স্টেশন থেকে রওনা দিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী এই ট্রেন। বন্ধন এক্সপ্রেসের প্রথম দিনের যাত্রী সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল।
বিগত দুবছর মহামারীর কারণে বন্ধন ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনদুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। আজ কলকাতা স্টেশন থেকে সেই যাত্রার ফের সূচনা হল। পুরনো সূচি মেনে পাঁচদিন মৈত্রী ও দুদিন বন্ধন এক্সপ্রেস চলবে। এদিন মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে সকাল সোয়া ৮ টা নাগাদ কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। এদিকে ১ জুন থেকে চালু হচ্ছে শিলিগুড়ি-ঢাকা রুটে মিতালী এক্সপ্রেস। ওইদিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন যাত্রার সূচনা করবেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মহম্মদ নুরুল ইসলাম সুজন।
দুই বছর বাদে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলে শুরু হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা অল্প হলেও তাঁদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। উৎসাহ দেখা গেছে কলকাতার রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যেও। এদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ৯ জন বাংলাদেশি এবং ১০ জন ভারতীয়সহ মোট ১৯ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতা স্টেশন থেকে ১০ বগির বন্ধন এক্সপ্রেস ছাড়ে। ইমিগ্রেশন এবং নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ডগ স্কোয়াড বিএসএফ, আর পি এফ, এবং সিআরপিএফ দাঁড়া ঘিরে ফেলা হয় কলকাতা স্টেশন। ট্রেন ছাড়ার ১ ঘণ্টা আগে ইমিগ্রেশনের যাত্রীরা আসা শুরু করেন। এরপর প্রত্যেকের টিকিট এবং পাসপোর্ট চেক করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে যাত্রীরা নিজেদের আসনে বসেন। নির্দিষ্ট সময় কলকাতা থেকে ছাড়ে বন্ধন এক্সপ্রেস।
বন্ধন ট্রেনে দুটি ক্লাস আছে। একটি হচ্ছে চেয়ার কার, ভাড়া ৮০০ টাকা। আরেকটি এক্সিট প্লাস, ভাড়া বারোশো টাকার কাছাকাছি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার পাবলিক রিলেশন অফিসার হরিনারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে মৈত্রীর বন্ধন সেটা আরো দৃঢ় হোক। এর পাশাপাশি আমরা চাই বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত, যোগাযোগ এবং ব্যবসার বৃদ্ধি পাক। ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে এটাই আমাদের কাম্য। আজ যারা গেলেন তারা যেন ভালোভাবে যেতে পারেন এটাই আমরা চাই এবং ট্রেনের সুবিধা ভোগ করুক।
জানা যাচ্ছে, কলকাতা স্টেশন থেকে বন্ধন চলবে সপ্তাহে দুইদিন বৃহস্পতিবার এবং রবিবার। ৫ দিন চলবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। অর্থাৎ এদিন থেকে সপ্তাহে সাত দিন কলকাতা স্টেশন থেকে ভারত-বাংলাদেশ রেল চলাচল করবে। টিকিট পাওয়া যাবে কলকাতা স্টেশন এবং কলকাতার ফেয়ারলি প্লেস এর ফরেন কাউন্টার থেকে। মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচল করে। বন্ধন চলে খুলনা-কলকাতা পথে। আর মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে নিউজলপাইগুড়ির পথে চলাচল করবে। ১ জুন চালু হবে মিতালী এক্সপ্রেস।
করোনা মহামারি আছড়ে পড়ার পরপরই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় ২০২০-এর ১৫ মার্চ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী এই ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংক্রমণ কমলে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধই ছিল। ২০১৭-এর ১৬ নভেম্বর কলকাতা থেকে বাংলাদশের খুলনা পর্যন্ত বিশেষ এই ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করেছিল। কলকাতা থেকে খুলনার মধ্যে দূরত্ব ১৭২ কিলোমিটার। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশে ৯৫ কিলোমিটার ও ভারতের দিকে পড়েছে ৭৭ কিলোমিটার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বন্ধন এক্সপ্রেসের যাত্রীদের বেনাপোলে পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর দুপুরেই বাংলাদেশের খুলনায় পৌঁছে যাবে ট্রেনটি। দুপুর দেড়টায় ফের খুলনা স্টেশন থেকে বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
এদিন ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্য রওনা দিল মৈত্রী এক্সপ্রেসও। বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। এর উদ্বোধন করেন সেদেশের রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। ট্রেনটিতে আসন রয়েছে ৪৫৬টি। আর ১৭০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বারতীয় যাত্রী ১৬ জন। আর একজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, এখন থেকে ট্রেনটি সপ্তাহে পাঁচদিন চলাচল করবে। বিকেল চারটায় কলকাতা স্টেশনে পৌঁছাবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। সোমবার (৩০ মে) আবার কলকাতা থেকে যাত্রী নিয়ে বিকেল চারটায় ঢাকা ফিরবে ট্রেনটি।