আজ সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন মামলার শুনানির কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। বসছে না প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তবে রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। এদিকে বিচারের দাবিতে বুধবার ফের রাত দখল করল সাধরণ মানুষ। সবার মুখেই প্রতিবাদের ভাষা। কারও হাতে পোস্টার 'জাস্টিস অফ আরজি কর', আবারও কারও পোস্টারে লেখা, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।
পিছিয়ে গেল সুপ্রিম-শুনানি
৯ অগস্ট তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে ২৬ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনায় অপরাধী কি একা সঞ্জয় রায়ই, নাকি আরও কেউ এবং প্রকৃত দোষীদের সাজা হবে কবে— এই প্রশ্ন নির্যাতিতার পরিবার থেকে শুরু করে গোটা দেশের। জবাব পেতে আজ, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারিত শুনানির দিকে নজর ছিল প্রত্যেকের। কিন্তু বুধবার সন্ধেয় শীর্ষ আদালতের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় আজ অনুপস্থিত থাকায় তাঁর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে কোনও নির্ধারিত মামলার শুনানি হবে না। শুনানি না-হলেও সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতের আগের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আরজি করের তদন্ত নিয়ে একটি রিপোর্ট আজই সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবে সিবিআই।
আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে 'আলোর পথে' কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ
জুনিয়র চিকিৎসকদের আহ্বানে বুধবার রাত ৯টা বাজতেই আঁধারে ঢাকল গোটা কলকাতা। আলো নিভিয়ে দেওয়া হল একাধিক বহুতলের। জ্বলছিল শুধুমাত্র কয়েকটি স্ট্রিট লাইট। আরজিকরের তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের। নেভানো হয় রাজভবনের আলো। মোমবাতি আর প্রদীপ হাতে রাস্তায় নামে তিলোত্তমাবাসী। বুধবার রাত ৯টা বাজতেই আরজি করের জরুরি বিভাগের সামনে মোমবাতি জ্বালানো হয়। এই ভবনের চার তলা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ। ফুল এবং মালা দেওয়া হয়েছে তরুণী চিকিৎসকের প্রতীকী মূর্তিতে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে পৌঁছন তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। আরজি কর হাসপাতালে ধর্নামঞ্চের সামনে সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়ে। বদলে জ্বালানো হয়েছিল মোমবাতি এবং প্রদীপ। অন্যদিকে, ঘড়ির কাঁটা ৯ টা ছোঁয়ার আগেই মোমবাতি হাতে রাজপথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ।কারও হাতে জ্বলছে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট। দোষীদের শাস্তি চেয়ে রাত দখল করেন সকলেই। সবার মুখেই প্রতিবাদের ভাষা। কারও হাতে পোস্টার ছিল'জাস্টিস অফ আরজি কর', আবারও কারও পোস্টারে লেখা, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।
উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মাও
চিকিৎসকদের প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতা তরুণীর বাবা-মা, কাকা-কাকিমা, দাদারা। তাঁরা পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নির্যাতিতার বাবা জানান, তাঁরা দেহ রেখে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রচুর পুলিশ থানা ঘিরে রেখেছিল। তাঁদের দেহ দাহ করতে বাধ্য করা হয়। তাঁদের দিয়ে সাদা পাতায় সই করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন। চাপ দিয়ে তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয় বলেই নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা জানান, পুলিশ গোটা বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল রাজভবনও
এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল রাজভবনও। আন্দোলনকারীদের ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে নিভে গিয়েছিল রাজভবনের আলো। টলিপাড়া-সহ সমাজের বিভিন্ন মহলের শিল্পীরা গত কয়েকদিন ধরেই বারবার প্রতিবাদের সামনের সারিতে থেকেছেন। প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন আর পাঁচজনের মতই। বুধবার তাঁদের দেখা গেল সেই ভূমিকা নিতে। যা বুঝিয়ে দিল, শহর কলকাতা প্রতিবাদ করতে ভোলেনি।
হাইকোর্টের নির্দেশে বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সন্দীপ ঘোষ
আরজি কর দুর্নীতি মামলার তদন্তে কেন সিবিআই? হাইকোর্টের নির্দেশে বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন সন্দীপ ঘোষ। যিনি নিজেই এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে। শুক্রবার মামলাটি শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে।