
যাত্রী নিরাপত্তা বাড়াতে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে কলকাতা মেট্রো রেল। এবার ট্রেনের দরজায় বসানো হবে ‘অ্যান্টি-ড্র্যাগ’ (Anti-Drag) প্রযুক্তি। এটা এমন একটি ব্যবস্থা, যা চলন্ত ট্রেনের দরজায় কারও জামা, ব্যাগ বা শরীরের অংশ আটকে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি ব্রেক প্রয়োগ করে ট্রেন থামিয়ে দেবে।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে এক যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির ইন্দ্রলোক স্টেশনে একই ধরনের দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুর পর থেকেই এই প্রযুক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আগামী বছরই আসছে অ্যান্টি-ড্র্যাগ যুক্ত ট্রেন
মেট্রো সূত্রে জানা গেছে, নতুন সিস্টেমে সজ্জিত ট্রেনের প্রথম ব্যাচ আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ব্লু লাইনে চালু হবে। রেলওয়ে বোর্ড ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে যে কলকাতার বিদ্যমান সমস্ত ট্রেনে এই প্রযুক্তি রেট্রোফিটমেন্ট ভিত্তিতে সংযোজন করা হবে।
মেট্রো মুখপাত্র জানিয়েছেন, 'ICF-কে (ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে নতুন CBTC-ভিত্তিক ট্রেনগুলিতে প্রথম দিন থেকেই অ্যান্টি-ড্র্যাগ বৈশিষ্ট্য যুক্ত থাকে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে।'
কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি
এক অফিসার ব্যাখ্যা করেছেন, যদি দুর্ঘটনাক্রমে কারও পোশাক বা কোনও জিনিস দরজায় আটকে যায় এবং ট্রেন চলতে শুরু করে, দরজার সেন্সর সঙ্গে সঙ্গে বল প্রয়োগের অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করবে। এর পরেই ট্রেনের জরুরি ব্রেক সক্রিয় হয়ে সেটি থেমে যাবে।
এই সিস্টেমটি জার্মানির এক ব্রেকিং সিস্টেম প্রস্তুতকারক সংস্থা তৈরি করেছে। তাদের প্রকৌশলীরা কলকাতার মেট্রো রেকে এই প্রযুক্তি যোগ করবেন। সম্প্রতি দিল্লির একটি শিল্পমেলায় প্রযুক্তিটি প্রদর্শনও করা হয়েছে।
অতীতের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলি
২০১৯ সালের ১৩ জুলাই পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ৬৬ বছর বয়সী সজল কুমার কাঞ্জিলাল ট্রেনে ওঠার সময় দরজায় হাত আটকে পড়ে দুর্ঘটনায় মারা যান। ট্রেনের দরজায় হাতের আঙুল আটকে যাওয়ায় ট্রেন তাঁকে টেনে নিয়ে যায়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির ইন্দ্রলোক স্টেশনে এক মহিলার শাড়ি দরজায় আটকে যাওয়ায় ট্রেন চলতে শুরু করে, পরে সেই মহিলা ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যান।
এই দুই দুর্ঘটনা যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার অ্যান্টি-ড্র্যাগ প্রযুক্তি বাস্তবায়নের পথে মেট্রো রেলওয়ে।