কলকাতার মেট্রো মানেই দ্রুত যাতায়াতের ভরসা। কিন্তু নীল লাইন ধরে যাত্রীদের সেই অভিজ্ঞতা এখন দুর্বিষহ। নিত্যযাত্রীরা বলছেন, প্রতিদিনই ট্রেন ১৫–২০ মিনিট দেরিতে চলছে। প্রতিটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে মিনিটের পর মিনিট। কারণ সামনের প্ল্যাটফর্ম খালি হতে দেরি হচ্ছে, ফলে ট্রেন ছাড়াও দেরিতে।
ভোগান্তির মূল কারণ
কবি সুভাষ স্টেশন প্রায় এক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
টালিগঞ্জ থেকে দমদম পর্যন্ত ৪০ বছরের পুরনো সুড়ঙ্গ এখন ‘সম্পূর্ণ ওভারহল’-এর পথে।
টানেল সংস্কার, ট্র্যাক ফিটিং বদল ও সিগন্যালিং আপগ্রেডের কাজ চলবে আগামী ৩–৪ বছর ধরে।
এর প্রভাবেই অনেক সময় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
যাত্রীরা তিতিবিরক্ত
আগে নোয়াপাড়া বা বরাহনগর থেকে উঠলেই যে কোনও মেট্রোয় গন্তব্যে পৌঁছানো যেত। এখন বিমানবন্দর লাইন চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি মেট্রোর জন্য আলাদা ঘোষণা হচ্ছে। কে কোন মেট্রোয় উঠতে পারবেন, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
আজ, বৃহস্পতিবার সকালেও টালিগঞ্জ (মহানায়ক উত্তম কুমার) থেকে ব্রিজি (শহিদ ক্ষুদিরাম) পর্যন্ত যাত্রীদের চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রতিদিন গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক দেরি হচ্ছে।
কেন জরুরি সংস্কার?
১৯৮৪ সালে কলকাতায় প্রথম চালু হয় মেট্রো। এরপর ১৯৯৫ সালে ব্লু-লাইনের ১৬.৪৫ কিমি সুড়ঙ্গ কাট-এন্ড-কভার পদ্ধতিতে তৈরি হয়। কিন্তু এতদিন ধরে কেবল রুটিন মেইনটেন্যান্স হয়েছে, বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।
একজন অবসরপ্রাপ্ত মেট্রো ইঞ্জিনিয়ার জানান, অতীতেও সুড়ঙ্গের দেয়ালে ধসের সমস্যা হয়েছে। ট্র্যাক ফিটিং দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। তাই এখন পূর্ণাঙ্গ ওভারহল জরুরি। বর্তমানে পিক আওয়ারে ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি ৬ মিনিট হওয়ার কথা। সংস্কারের পর তা আরও কমানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ, যাতে যাত্রী চলাচল সহজ হয়।
যাত্রী সংখ্যা রেকর্ড ছুঁইছুঁই
তীব্র দুর্ভোগের মধ্যেও মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করেছেন মেট্রোয়।
সোমবার যাত্রী সংখ্যা: প্রায় ৮ লক্ষ
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত: ৬ লক্ষেরও বেশি
নতুন ১৪ কিমি রুট চালুর পর বিমানবন্দর, হাওড়া ময়দান, রুবি-বেলেঘাটা সংযোগে যাত্রী চাপ আরও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত
ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরে শিয়ালদা–এসপ্ল্যানেড যুক্ত হওয়ার পর এসপ্ল্যানেডে ভয়ানক ভিড় হচ্ছে। ব্লু লাইন সংস্কারের সময় এই চাপ আরও বাড়বে। সব মিলিয়ে কলকাতার নীল লাইন এখন যাত্রীদের জন্য ‘সহ্যশক্তির পরীক্ষা’। তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই দুর্ভোগ সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদে যাত্রীদের জন্য আরও নিরাপদ ও দ্রুত মেট্রো পরিষেবা পেতে এই ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।