কলকাতা মেট্রোয় আত্মহত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব লোকসভায় জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা সর্বাধিক ঘটেছে ২০২৪ সালে। এই পরিসংখ্যান ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে শহরজুড়ে। আত্মহত্যা রুখতে পদক্ষেপ করা হলেও, তা যে কার্যকর হয়নি, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
বিগত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান
রেলমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কলকাতা মেট্রোয় আত্মহত্যা করেছিলেন ১ জন। ২০২১ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ২০২২ সালে ৫ জন এবং ২০২৩ সালে ৪ জন আত্মহত্যা করেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭-এ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্তই ইতিমধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান রেলমন্ত্রী।
আত্মহত্যা রুখতে পদক্ষেপ, কিন্তু কার্যকর নয়
মেট্রোয় আত্মহত্যা রুখতে ‘স্লাইডিং দরজা’ এবং গার্ডরেল বসানোর মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর-৫ পর্যন্ত গ্রিন লাইনের ১২টি স্টেশনে ইতিমধ্যেই ‘স্লাইডিং দরজা’ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি, ব্লু লাইনের (দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ) কালীঘাট স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে গার্ডরেল বসানো হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থায় যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও আত্মহত্যা ঠেকানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গার্ডরেল ঘিরে যাত্রীদের ক্ষোভ
গার্ডরেল ব্যবস্থা চালুর পর থেকেই যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ শাখায় তিনটি সংস্থার তৈরি ভিন্ন দৈর্ঘ্যের ট্রেন চলে। বিভিন্ন ট্রেনের দরজার অবস্থান এবং পরিসর আলাদা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই দরজা গার্ডরেলের ঠিক সামনে না পড়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের ওঠানামায় অসুবিধা হচ্ছে। গার্ডরেলের উচ্চতা প্রায় চার ফুট এবং দৈর্ঘ্য ছ’ফুট হওয়ায় অধিকাংশ ট্রেনের দরজা রেলিংয়ের ঠিক সামনেই না পড়ায় যাত্রীদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।
‘স্লাইডিং দরজা’ না থাকায় ক্ষোভ
অনেক যাত্রীর মতে, গার্ডরেলের পরিবর্তে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিনডোর (Sliding Platform Screen Doors) বসানোই বেশি কার্যকর হতে পারে। প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিনডোর ট্রেনের দরজার সঙ্গে সমন্বয় রেখে খোলে ও বন্ধ হয়, যা যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। তবে এই ব্যবস্থা সব স্টেশনে এখনও কার্যকর হয়নি। তার পরিবর্তে গার্ডরেল বসানোকে অনেকেই অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, গার্ডরেল ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা পর্যবেক্ষণ করেই ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আত্মহত্যা রুখতে পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নজরদারিও জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।