কারও জীবনের 'প্রাণভোমরা' রাখা আছে ফাটল ধরা বাড়িতেই। কেউ আবার অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে পড়েছেন অথৈ জলে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে বৌবাজারের বাসিন্দারা বিপর্যয়ের চারবছরেও অনিশ্চয়তায়।
বউবাজারের প্রথম বিপর্যয়ের চারবছর হয়ে গেছে। আজও ঘরছাড়া বহু মানুষ। অনেকের বাড়িই ভেঙে গিয়েছে। কেউ বুঝতে পারছেন না, আদৌ নিজের বাস্তুভিটায় ফিরতে পারবেন কী না। ২০১৯ সালে ঘটে প্রথম দফার বিপর্যয়। সেই সময়ে ভেঙে পড়া ও বিপর্যস্ত মিলিয়ে মোট ২৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা করেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। আরও ২৩টি বাড়িতে মেরামতি করা হয়। পরিবার-পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি মেরামত করা বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় বাসিন্দাদের। তবে যে বাড়িগুলি নতুন করে তৈরির কথা, সেগুলির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের রাখা হয় শহরের নানা জায়গায়। ওই সমস্ত পরিবার-পিছুও দেওয়া হয়েছে পাঁচ লক্ষ করে টাকা। কিন্তু সবাই নিজের বাড়িতেই ফিরতে চান, কিন্তু উপায় নেই।
তলিয়ে যাওয়ায় বাস্তুচ্যুত হওয়া বাসিন্দাদের কোনও ধারণা নেই যে তাঁরা কবে তাঁদের নতুন বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবেন। যা মেট্রো কর্তৃপক্ষ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল, বৃহস্পতিবার বিপর্যয়ের চতুর্থ বার্ষিকী চিহ্নিত করা হয়েছে।
একজন বাসিন্দা জানালেন, “যখন আমরা চলে যাই, আমাদের বলা হয়েছিল যে আমরা দুবছরের মধ্যে ফিরে আসব। এরপর সময় বাড়ানো হয় চার বছর। কিন্তু আজ অবধি, কেএমআরসি থেকে আমরা কখন ফিরতে পারব সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই।”
কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি) হল ১৬.৫ কিলোমিটার প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা, যা সম্পূর্ণ হলে হাওড়া ময়দান এবং সেক্টর Vকে সংযুক্ত করবে। বর্তমানে পরিষেবাটি সেক্টর V এবং শিয়ালদার মধ্যে চালু রয়েছে।
কিন্তু মাথার উপর থেকে ছাদ সরে যাওয়ায় এখন বাসিন্দাদের প্রশ্ন, আর কতদিন উদ্বাস্তু জীবন কাটাবেন তাঁরা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা পরিদর্শন করে দেখে পরিস্থিতি বিচার করে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতটা তা-ও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী। কোন কোন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে কলকাতা মেট্রোর ওই লিখিত বিবৃতিতে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আজও কোনও ব্যবস্থা মেট্রো করেনি বলেই অভিযোগ।