কলকাতার একাংশে নতুন করে বৃষ্টি। বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টি হলেও, হাওয়া অফিস বলছে, কলকাতা সহ একাধিক জেলায় একাধিক জেলায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে আবারও ঝেঁপে বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার থেকে ফের নিম্নচাপের আশঙ্কা। তার জেরে বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গেওকলকাতায়।পূর্বাভাস জারি করেছে আলিপুর আলহাওয়া দফতর। নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। আর নতুন করে বৃষ্টির আশঙ্কা চিন্তা বাড়াচ্ছে।
জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়নি মিন্টোপার্ক। সকাল থেকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে ওই এলাকায়। বাস, শাটল চললেও তা সংখ্যায় অল্প। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার বিপর্যয়ের জেরে কলকাতা শহরে ৯ জন সহ মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশই জমা জলে পড়ে থাকা ইলেকট্রিকের তারে পা দিতেই তড়িদাহত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। মোমিনপুরে এক মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত পুজো চালতাবাগান সর্বজনীনের। সেখানে প্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকেছে জল। এখনও জল জমে রয়েছে সেখানে। বেহাল দশা মণ্ডপের।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি সংলগ্ন রাস্তা, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিটের একটি অংশ এখনও জল জমে রয়েছে। কাঁকুরগাছি আন্ডারপাস-সহ বেশ কয়েকটি আন্ডারপাসে এখনও জল জমে রয়েছে। এজেসি বোস রোড সংলগ্ন মিন্টো পার্ক, ক্যামাক স্ট্রিট, লর্ড সিংহ রোড, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট-সহ বেশ কিছু রাস্তা থেকে জল এখনও নামেনি। গড়িয়াহাটে আইটিআইয়ের কাছে জল জমে আছে। মঙ্গলবার যে পরিস্থিতি ছিল, এখনও সেখানে প্রায় একই অবস্থা হয়ে রয়েছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় পাম্পের মাধ্যমে জল বার করা হচ্ছে। তার ফলে অনেক জায়গায় জল কমেছে। মোটের উপর যান চলাচলও অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
জল জমে থাকলেও মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার সকালে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগে যে সব জায়গায় প্রায় হাঁটুসমান জল জমে ছিল, সেখানে এখন কোথাও গোড়ালিসমান, কোথাও বা তার চেয়ে কিছু বেশি জল জমে আছে। মঙ্গলবার রাতেও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় পাম্প বসিয়ে জল নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার ফলে শহরের মূল সড়কগুলিতে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে গলিপথগুলিতে এখনও দুর্ভোগ অব্যাহত।
বিদ্য়ুৎপৃষ্ট হয়ে কলকাতায় মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে দুটি সংগঠন। চিঠিতে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার আচমকাই বাগমারি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের ভালভ বিকট শব্দে ফেটে যায়। যেহেতু এই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন উত্তর কলকাতার ৪টি ওয়ার্ডের পানীয় জল পরিসেবার কেন্দ্র, তাই বিপত্তির কারণে পানীয় জলশূন্য হতে পারে এলাকাগুলি। এর মধ্যে রয়েছে ১৩, ১৪, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। অর্থাৎ উল্টোডাঙ্গা, কাঁকুড়গাছি, বাগমারির মত ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলি।
চালতাবাগান সর্বজনীন দুর্গামণ্ডপ শহরের জনপ্রিয় একটি পুজো। প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন প্যান্ডেল চত্বর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষ্মী এবং গণেশ প্রতিমা। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টায় পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।
হাওড়ায় এখনও কারশেডে ও লাইনে জল জমে আছে। বহু লোকাল ট্রেন আটকে রয়েছে মাঝ রাস্তায়। চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা। ট্রেন কখন ছাড়বে, কেউ জানেন না। রেলও ঘোষণা করছে না। সব মিলিয়ে আজও পরিস্থিতি ভয়াবহ।
এখনও জল নামেনি বালিগঞ্জে।
তারাতলায় বেহাল রাস্তা নিয়ে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে বৃষ্টি বিপর্যয়ের কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা ৪৫ মিনিট লাগছে বাসে যেতে। যে কোনও সময়ে হচ্ছে বাস উল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় যাত্রীরা।
আজও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে। আরও একটি নিম্নচাপ তৈরিরও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে হাওয়া অফিসের তরফে।
মেয়র বলছেন, এটি একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি। এর আগে কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ১৮০ মিলিমিটার। কিন্তু মঙ্গলবার বৃষ্টি হয় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি। দেহরাদূন বা জম্মুতে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করেন মেয়র। তবে, রিস্থিতি উন্নতি হয়েছে বলে মেয়রের দাবি। এরজন্য পুরকর্মীদের ধন্যবাদ দেন মেয়র।
মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশন ইয়ার্ড, শিয়ালদহ সাউথ স্টেশন ইয়ার্ড, চিৎপুক নর্থ কেবিন, শিয়ালদার একাধিক কারশেডে জমে জল। যা বের করতে কার্যত কালঘাম এক হয়ে যায় রেলকর্মীদের। রেল লাইনের জলের সঙ্গে আশপাশের এলাকার জমা জলও মিশে যায়। ফলে, জল নিষ্কাশন কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও, সন্ধে গড়িয়ে বিকেল হতেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। রাত বাড়তেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে মেট্রো চলাচলও।
জমা জলে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ির গতি স্লথ। ফলে মঙ্গলের বিপর্যয়ের পর বুধে অফিস পৌঁছতে ঢের দেরি হচ্ছে। এদিন সকালেও জলের তোড়ে অনেক গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। জলে ফেঁসে যাচ্ছে দু'চাকার যান। গণপরিবহণ নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছে শহরবাসী। বাস-অটো-ট্যাক্সির সংখ্যা কম। অ্যাপ বাইক, গাড়ির ভাড়া আকাশছোঁয়া।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামিকাল বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। নতুন নিম্নচাপের জেরে পঞ্চমীতে ফের ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। পুজোর ৪ দিনও ভোগাতে পারে নিম্নচাপের বৃষ্টি।
মঙ্গলবার দিনভর দুর্যোগের পর বুধবার সকালে রোদ দেখে খুশি সকলেই। তবে, আশঙ্কার বিষয় আগামিকাল ফের ভারী বৃষ্টির ভ্র্কুটি রয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হবে, শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে সঙ্গে বজ্র-বিদ্যুৎ ও ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে। ফলে সব মিলিয়ে দুর্যোগের মেঘ এখনই কাটছে না।
সময় যত গড়াবে জল নামবে বলে মনে করছেন পুর আধিকারিকরা কিন্তু কতক্ষণে নামবে তা স্পষ্ট নয়। এদিকে লকগেট বন্ধ হবে বেলা ১২টা থেকে ১২.৩০টা নাগাদ, ফলে বৃষ্টি না হলেও জল তখন আর নামবে না।
কলকাতার আনন্দ পালিত রোডে জল রয়েছে অনেকটাই। একই অবস্থা সিআইটি রোডের একটা বড় অংশেও। জল এড়িয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলছে গাড়ি ও বাস। অফিস টাইমে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, জল দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে।
বহু জায়গা এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশে এখনও রয়েছে জল। গতকাল পার্ক সার্কাসের রাস্তায় জল থইথই করছিল। পার্ক সার্কাসের একটা অংশে জল এখনও নামেনি। পাটুলি, মিন্টো পার্ক, মুকুন্দপুরেও একই ছবি। সেখানেও এখনও রাস্তা জলমগ্ন। পাটুলিতে হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে জল ডিঙিয়ে হেঁটে চলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন জলযন্ত্রণার ছবি তাঁরা আগে দেখেননি। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও জল না কমায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা।