Advertisement

Kolkata Semiconductor Plant: বিরাট ব্যাপার! কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট হবে, কী এই কারখানা? কত লোক লাগে?

Kolkata Semiconductor Plant: সার্বিক প্রচেষ্টায় শেষমেশ শিকে ছিঁড়ল বাংলার। কলকাতার এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট বাংলার শিল্প মানচিত্রকেই পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্ল্যান্ট বাস্তবায়িত ও সফল হলেই তা ভবিষ্যতে রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আনতে পারে বলে ধারণা অনেকের। 

কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট হলে সেটা সত্যিই বড় ব্যাপার হবে।
সৌমিক মজুমদার
  • কলকাতা,
  • 24 Sep 2024,
  • अपडेटेड 4:54 PM IST
  • দীর্ঘ সময় ধরে এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও।
  • সার্বিক প্রচেষ্টায় শেষমেশ শিকে ছিঁড়ল বাংলার।
  • এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট বাংলার শিল্প মানচিত্রকেই পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Semiconductor Plant Kolkata: কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার পর একটি বিরাট ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও। সার্বিক প্রচেষ্টায় শেষমেশ শিকে ছিঁড়ল বাংলার। এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট বাংলার শিল্প মানচিত্রকেই পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্ল্যান্ট বাস্তবায়িত ও সফল হলেই তা ভবিষ্যতে রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আনতে পারে বলে ধারণা অনেকের। 

সবই তো বোঝা গেল... কিন্তু এই সেমিকন্ডাক্টর কী? 'খায় না মাথায় দেয়' বুঝতে পারছেন না অনেকেই। তাঁদের জন্য সহজ ভাষায় বিষয়টি বোঝানো হল।

সেমিকন্ডাক্টর কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এক কথায় বললে সেমিকন্ডাক্টর এমন একটি উপাদান যা বিদ্যুৎ পরিবহণে সহায়ক। এটি আধুনিক প্রযুক্তির মূল বলা যেতে পারে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ডিভাইস, গাড়ি, এমনকি চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মতো অসংখ্য প্রযুক্তিতে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহৃত হয়। সেমিকন্ডাক্টর ছাড়া এখনকার কোনও আধুনিক সরঞ্জামই অচল। 

এখন সবকিছুতেই সেমিকন্ডাক্টর লাগে।

তাই এটার চাহিদা ঠিক কতটা, তা আর নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। এটুকুতেই আশা করি বুঝতে পারছেন।

কিন্তু যে জিনিসের এত চাহিদা, সেটা কিন্তু তৈরি করা মোটেও সহজ নয়।

এখন কোথায় কোথায় সেমিকন্ডাক্টর তৈরি হয়?

সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন তো আছেই। সেই সঙ্গে প্রচুর সংখ্যায় এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে মাত্র হাতে গোনা কিছু দেশই এখন সেমিকন্ডাক্টর সাপ্লাই দেয়। তাদের মধ্যে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, চিন, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সিঙ্গাপুরে গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের এক্সপ্যানসন ফেসিলিটি। এই সংস্থাই কলকাতায় ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট করবে।

একটা বিষয় খেয়াল করুন, এই প্রতিটি দেশই কিন্তু প্রযুক্তি ও শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। 

আর এবার সেই ক্ষেত্রটাতেই এন্ট্রি নিচ্ছে ভারত। একের পর এক সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট গড়ে এক ঝটকায় এই শিল্পে ভারতকে দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কলকাতায় এই নতুন প্ল্যান্ট সেই লক্ষ্যপূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Advertisement

সেমিকন্ডাক্টর সংকট মনে আছে?

COVID-19 মহামারীর সময়কার কথা। বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের বিশাল অভাব দেখা দিয়েছিল। এই চিপ সংকটের কারণে অনেক প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। যেমন, গাড়ি, স্মার্টফোন, এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এশিয়ার যে দেশগুলি সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করত, সেখানেই তুমুল হারে কোভিড বেড়েছিল। রফতানি বন্ধ ছিল। 

এরপরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝল যে, এভাবে নির্দিষ্ট কিছু দেশের উপর ভরসা করে থাকলে, এই সংকট মেটানো যাবে না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই জাতীয় উৎপাদন করা কঠিন। কারণ সেখানে কাঁচামাল, হিউম্যান রিসোর্স(কর্মী), ফ্যাক্টরি স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল। তার চেয়ে এটি আউটসোর্সিং করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এই সংকটের সময় থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়েছে, যার মধ্যে কলকাতার এই প্রকল্প অন্যতম। 

মার্কিন সংস্থা মাইক্রোন টেকনোলজি গুজরাটের সানন্দে ভারতের প্রথম হাই-এন্ড সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। এটি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এতদিন গুজরাটে তিনটি এবং একটি অসমে তৈরি হচ্ছে।

কত চাকরি হয়?

সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টে অনেক প্রশিক্ষিত কর্মী লাগে।

তিনটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল টাটা ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড (TEPL)। এই প্রকল্পে ৯১,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের মাধ্যমে ডহলেরা, গুজরাটে সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপিত হবে।

এর পাশাপাশি, সানন্দ, গুজরাটে CG পাওয়ার এবং মরিগাঁও, অসমে টাটা সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড টেস্ট প্রাইভেট লিমিটেডের (TSAT) ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। এই ইউনিটগুলির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার প্রযুক্তিগত কর্মসংস্থান এবং আরও ৬০ হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পশ্চিমবঙ্গের জন্য দারুণ ব্যাপার

কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট স্থাপন পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর একটি বিশাল সুযোগ। গত বেশ কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প উদ্যোগগুলি সেভাবে বেড়ে ওঠেনি। কিন্তু এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টের মাধ্যমে রাজ্য পুনরায় বড় শিল্পায়নের পথে হাঁটতে পারবে।

প্রথমত, এটি বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে দক্ষ প্রযুক্তিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষকদের প্রয়োজন।

এই ধরনের কারখানায় সরাসরি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি, টেলিকম এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে বড় মাপের বিনিয়োগ আসবে। গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের উদ্যোগে কলকাতায় স্থাপিত হবে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র। এটি ভারত ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য চিপ সরবরাহ করবে।

@GlobalFoundries-এর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলের পোস্ট।

এই চিপগুলো অটোমোটিভ, এআই এবং ডেটা সেন্টার সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত হবে। এর ফলে রাজ্য একটি উচ্চপ্রযুক্তি উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

সার্বিক উন্নয়ন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পটিকে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাজ্যের অর্থনীতি এবং শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে এটি বড় প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও, কলকাতার এই প্ল্যান্ট পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) কাজেও সহযোগিতা করতে পারবে। এটি ভবিষ্যতে রাজ্যের প্রযুক্তি খাতের বিকাশে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।

Advertisement

কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট স্থাপন হলে এটি রাজ্যের জন্য এক নতুন শিল্পের দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের সুযোগই হবে না, বরং দেশের অন্যতম শিল্পকেন্দ্র হিসেবেও রাজ্যকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে।

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement