'এমন জল আগে কখনও দেখিনি...।' ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও শহরবাসীর মুখে এই এক কথা। মঙ্গলের জলযন্ত্রণা অব্যাহত বুধেও। পরিস্থিতি এখনও শোচনীয় উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার অধিকাংশ এলাকায়। ৩৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে প্রবল বৃষ্টির সাক্ষী হয়েছে তিলোত্তমা। উৎসবের প্রাক্কালে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন মানুষ। জমা জলে তড়িদাহত হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন এবং CESC কার্যত একে অপরের দিকে দায় ঠেলেছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ছোটবেলা থেকে এমন ভয়াবহ বৃষ্টি তিনি কখনও দেখেননি। এদিকে জলের পরিমাণ কিছুটা কমলেও এখনও জলবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে শহরবাসীকে। পুরসভা এবং রাজ্য সরকারের দাবি, ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু বিরোধী পক্ষ সরব, ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রশাসনের অচলাবস্থা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে।
কোন কোন এলাকা এখনও জলবন্দি?
বুধবার সকালেও সল্টলেক সহ বিধাননগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। কোথাও কোথাও হাঁটুসমান জল রয়েছে এখনও। পাম্পের সাহায্যে জল নামানোর চেষ্টা চলছে। মন্থর গতিতেই চলছে গাড়ি। চরম ভোগান্তি আইটি হাবে কর্মরতদের। জল জমে রয়েছে উত্তর কলকাতার শিয়ালদা, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, চিত্তঞ্জ অ্যাভিনিই, বিবি গাঙ্গলী স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, কলেজ স্ট্রিট, কাশীপুর, বেলগাছিয়া, সিঁথি, সুকিয়া স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া এলাকায়। জলের পরিমাণ বেশি বই ক নয় বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, ঢাকুরিয়া, গোলপার্ক, মোমিনপুর, যোধপুর পার্ক মিন্টো পার্ক, ক্যামাক স্ট্রিট, রডন স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়ার সরণি, পার্ক সার্কাস, নিউ আলিপুর,জোকা, সরশুনা, মেটিয়াবুরুজ এলাকায়। কসবা, লেনিন সরণি, বিধান সরণি, মহাত্মা গান্ধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, সর্বত্রই এক চিত্র।
জমা জলে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ির গতি স্লথ। ফলে মঙ্গলের বিপর্যয়ের পর বুধে অফিস পৌঁছতে ঢের দেরি হচ্ছে। এদিন সকালেও জলের তোড়ে অনেক গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। জলে ফেঁসে যাচ্ছে দু'চাকার যান। গণপরিবহণ নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছে শহরবাসী। বাস-অটো-ট্যাক্সির সংখ্যা কম। অ্যাপ বাইক, গাড়ির ভাড়া আকাশছোঁয়া। এদিকে, মেট্রোতে মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। বুধে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, সেদিকে তাকিয়ে জনতা। পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় বাড়ির একতলা এখনও জলমগ্ন। গ্যারাজে দাঁড়ানো গাড়ির চাকাও জলে ডুবে।
পুজোর মুখে আবার নিম্নচাপের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সম্ভাব্য সব রকম পরিস্থিতির জন্য পুরসভা তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।