রেকর্ড বৃষ্টিতে জল জমে বিরাট ক্ষতির মুখে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া। কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রশাসকরা। বই, ফর্মা, ম্যাগাজিন, সাদা পাতা জলে ভিজে গিয়েছে। বড় প্রকাশনা সংস্থা থেকে ফুটপাথের দোকানদার, কেউ বাদ নেই। তাই মুখভার কলেজ পাড়ার। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দোকানদাররা। এছাড়াও, কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা মেশিন রুমে জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে ছাপার মেশিনের।
সোমবার টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কলেজ স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বর্ণপরিচয় মার্কেটে হাঁটুসমান কোমর জমে যায়। বেশিরভাগ জায়গায় কোমর সমান জল জমে যায়। তাতেই এই বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেষবার ২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে কলেজ স্ট্রিটের এমন বেহাল দশা হয়েছিল৷ কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় না হলেও কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বইপাড়ায় ক্ষতি আমফানের ক্ষতিকেও ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পত্রভারতীর প্রধান তথা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর প্রকাশনা সংস্থাতেই ক্ষতির পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে কলেজ পাড়ায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, পত্রভারতীর গোডাউন, শোরুমে জল ঢুকে গিয়েছে। অনেক বই নীচে পড়ে ছিল। সমস্ত ভিজে গিয়ে শেষ।
পত্রভারতী তাদের ফেসবুক পেজে বুধবার লিখেছে, 'এমন ভয়াবহ অবিশ্রান্ত বর্ষণ বিধ্বংসী আমফানের সময়েও এই নগরী প্রত্যক্ষ করেনি। সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্লাউডবার্স্টের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা আবহাওয়া অফিসেরও বোধহয় জানা ছিল না। তাই ' নিশীথরাতের বাদলধারা' যখন অগ্ন্যুৎপাতের মতো হঠাৎ শহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রাত ২ টো নাগাদ, তখন সকলে নিদ্রামগ্ন।... অতএব যা হওয়ার, তাই হয়েছে। পুজোর মাত্র তিন চারদিন আগে এই চরম বিপর্যয়ে সমস্ত রকমের ব্যবসায়ী ও উদ্যোগীদের অবস্থাই শোচনীয়। আমাদের কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার কী অবস্থা? বইয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলে, ক্ষুদ্র মাঝারি ও বৃহৎ বই প্রকাশক, বিক্রেতা, ছাপাখানা, বাঁধাই এবং পুজো সংখ্যার বর্ণময় ডালি সাজিয়ে বসে থাকা বিক্রেতারা বিপর্যস্ত। পুজোর আনন্দ উপভোগ করার মতো অবস্থায় তাঁরা আর নেই। তবে এটাও আশার কথা, কেউই কিন্তু ভেঙে পড়েননি। সবাই আকস্মিক এই চরম ধাক্কা সামলে গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন আগামীর দিকে এগিয়ে চলার। আমরাও এই নীতিতে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আমাদের কিশোর ভারতী, পত্রভারতী অন্যান্য সহযোগী সংস্থাও দ্রুত প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি সামলে নিয়ে নতুন সৃষ্টির কাজে দ্রুত মনোনিবেশ করতে চাইছি। আমাদের একমাত্র যাচনা, আপনাদের ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও আশিস শুধু আমাদের সঙ্গে থাকুক।'
দে’জ প্রকাশনার কর্ণধার সুধাংশু দে বলেন,, গোটা এলাকা জলের তলায়। কয়েক হাজার প্রকাশনা সংস্থা, প্রেস, দোকানদাররা ক্ষতির মুখে। আমফানের চেয়েও এবার বেশি ক্ষতি হবে। কয়েক কোটা টাকা ছাড়াতে পারে। আমার নিজের সংস্থাতেই ৪ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে।