'বাবা, ওরা আমায় মারছে... গলা টিপে ধরেছে... আমি সহ্য করতে পারছি না... তুমি এসো, নিয়ে যাও আমায়'—শেষবার ফোনে নাকি বাবার কাছে এভাবেই আর্তি জানিয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সি শ্বেতা প্রসাদ সাউ। মেয়ের কণ্ঠে অসহ্য যন্ত্রণা শুনেও শেষরক্ষা হল না। চোখের সামনে মেয়ের নিথর দেহ দেখে ভেঙে পড়েছেন বাবা ওমপ্রকাশ প্রসাদ। তাঁর অভিযোগ, পুত্রসন্তান না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা নিপীড়নের জেরে খুন করা হয়েছে শ্বেতাকে।
বুধবার সকালে বেলেঘাটা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। শ্বেতার বাবার অভিযোগ, খবর পেয়েই তিনি শিয়ালদার বাড়ি থেকে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি ছুটে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছলে তাঁর মেয়ের শ্বশুর কিশোরীলাল তাঁকে অন্য ঘরে বসিয়ে রাখেন। মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানতে পারেন, বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছে শ্বেতাকে, এমনকি গলা টিপে খুনের চেষ্টাও হয়েছে।
বাবাকে সেসব জানানোর সময়েই শ্বেতার শাশুড়ি ফোন কেড়ে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ। উদ্বিগ্ন বাবা এরপর জোর করে মেয়ের ঘরে ঢোকেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তিনি দেখেন, মেয়ে নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তড়িঘড়ি এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শ্বেতাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের দাবি, শ্বেতার অপরাধ ছিল, তার দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সে কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। মৃতার বাবা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'মেয়ে আগেও বলেছিল, ওকে বেল্ট দিয়ে মারা হয়, গলা টিপে দেওয়া হয়। কারণ পুত্রসন্তান না হওয়া, আর ওর স্বামীকে এক মহিলার ফোন করা নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করা হয়।'
এই ঘটনায় নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শ্বেতার পরিবারের তরফে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে এবং পুরো শ্বশুরবাড়ির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা। মৃতার আইনজীবী জানিয়েছেন, 'খুন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে যাতে পুরো পরিবার শাস্তি পায়, সেই লক্ষ্যেই আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।'
তবে মৃতার শাশুড়ি রীনা দেবী সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শ্বেতা নিজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, মেঘালয়ে যাওয়া নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল মহিলা ও তাঁর স্বামীর মধ্যে।