লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে একাই লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। তা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি কংগ্রেস গোটা দেশে ৪০টি আসন পাবে কিনা সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন। নাম না করে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাকেও বিঁধেছেন। যদিও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মমতাকে চটাতে নারাজ ছিলেন। তাঁরা জোটের পক্ষেই সওয়াল করে গিয়েছিলেন। তবে প্রদেশ নেতৃত্ব বরাবর চেয়েছে বামেদের সঙ্গে জোট। এমন প্রেক্ষাপটেই সম্ভবত জোট নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার বহরমপুর টাউন ক্লাবে। মুখোমুখি বসবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে প্রাথমিক আসন রফা নিয়ে বৈঠকে বসবেন মহম্মদ সেলিম। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের কে কোথায় প্রার্থী দেবে তা নিয়েই কথা হবে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ১২ থেকে ১৩টি আসন চাইবেন অধীর চৌধুরী। তবে গতবারের মতো অনড় মনোভাব দেখাবে না কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গের বহরমপুর ও রায়গঞ্জের মতো আসনে লড়বে কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ নিয়ে গতবার দুই দলের মধ্যে বিতণ্ডা হয়েছিল। তা এবার চাইছে না কংগ্রেস। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গে পুরুলিয়া আসনটি চাইবে কংগ্রেস।
রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে শুরু থেকেই প্রদেশ নেতৃত্বের কিয়দংশ আপত্তি তুলেছিল। তাদের মত ছিল, এই জোট থেকে কংগ্রেসের কোনও লাভ হবে না। উল্টে কংগ্রেসের যে সংগঠন এখনও বেঁচে আছে, তা-ও থাকবে না। বামেদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাঁরা খুশি। bangla.aajtak.in-কে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরী বলেন,'তৃণমূলের মতো বিনাশকারী শক্তির সঙ্গে যে কংগ্রেস হাত মেলাচ্ছে না, এটা আমাদের জয়। আসন রফা নিয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না, দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার পরই তা স্থির হবে। আমরা অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসকে দেখতে চাই। বামেদের সঙ্গে আলোচনা যে শুরু হচ্ছে, সেই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।' এনিয়ে এক্স হ্যান্ডেলেও লিখেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয়স্তরে ইন্ডিয়া জোটে থাকলেও রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সখ্যতা তৈরি হয়নি। শুরু থেকেই অধীর চৌধুরীর নানা ইস্যুতে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লাগাতার আক্রমণ মেনে নিতে পারেনি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের বক্তব্য, বিজেপির হাতে তামাক খাচ্ছেন অধীর। এদিকে, কংগ্রেসকে দুটি আসন ছাড়তে রাজি ছিলেন মমতা। যা মেনে নিতে পারেনি কংগ্রেসও। তারা আরও বেশি আসন চায়। যা দিতে চাননি তৃণমূল নেত্রী। তার উপরে মমতার দাবি, রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা যে বাংলার উপর দিয়ে যাবে, সেই খবর তাঁকে জানানো হয়নি। যদিও কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছিলেন, মমতাকে চিঠি দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। এর মধ্যে মমতা কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আক্রমণকে আরও তীব্র করেন। ফলে দুই শিবিরের মধ্যে মতানৈক্য আরও চওড়া হয়। তবে বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে কথা শুরু হতে চললেও তা যে সার্থক হবে, তা এখনই বলা যায় না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে দিচ্ছেন, ২০১৯ সালে বারবার আলোচনার পরেও আলাদা আলাদা লড়াই করে দুই দল। ২০২১ সালে জোটে আইএসএফ-কে নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন অধীর। তাই দুই দলের আলোচনার জল কোন দিকে গড়ায় তা বলবে ভবিষ্যৎ।