একুশের সভা থেকে 'ভাষা আন্দোলন'-এর ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। বাঙালিদের চক্রান্তের শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেফতার করা হচ্ছে বাংলা ভাষীদের। এই অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেত্রীর দাবি, বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে ফের আন্দোলনে নামবেন তিনি। সেই মোতাবেক দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজ্যজুড়ে মিটিং-মিছিল করার আহ্বানও জানান। ২০২৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে এটাই যে তাঁর প্রধান ইস্যু তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা। প্রয়োজনে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করবেন, সেই হুঁশিয়ারিও দেন।
চলতি বছরেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। সেই রাজ্য়ে ভিনদেশি নাগরিকদের ভোটারকার্ড থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় হল এই SIR-এর লক্ষ্য। তবে কমিশনের এই পদক্ষেপে প্রথম থেকেই সবর হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি, বিহারের মতো বাংলাতেও লাখ লাখ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। তাদেরও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। বিজেপির এই দাবিকেই বাংলা বিরোধিতা বলে উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন চক্রান্ত করছে। ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করে হচ্ছে অনেক মানুষকে।'
মমতা বলেন, 'বিজেপি যেটা করছে সেটা সুপার এমার্জেন্সির শামিল। বিহারে নির্বাচন কমিশন থেকে নাম বাদ দিচ্ছে। গুজরাতে বসে বাংলার মানুষের নাম কাটছে। একজন বাঙালির সঙ্গে চারজন ভিনরাজ্যের মানুষের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বাংলার একজনের নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে আন্দোলন হবে। দরকারে দিল্লিরাজের পতন ঘটাতে হবে। দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন হবে। কমিশনের দপ্তর ঘেরাও হবে।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'নির্বাচনের আগে প্রথম সার্কুলার ভারত সরকার পাঠিয়েছে। এক হাজারের উপর লোককে কাউকে মধ্যপ্রদেশ, কাউকে ওড়িশা, তো কাউকে রাজস্থানের জেলে ভরা হয়েছে।' এরপরই পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বঞ্চনার অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। ভিনরাজ্য়ে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে দাবি করে তাঁর দাবি, 'বাংলায় কথা বলতে ভয় পান আপনারা। বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দিয়েছে। বাংলা থেকেই লেখা হয়েছে,জাতীয় সঙ্গীত।'
বিজেপি-কে আক্রমণ করে বলেন, 'বাঙালিদের সংস্কৃতিকেও বিজেপি ঘৃণা করে। সেজন্য মাঝে মধ্যেই মাছ-মাংস নিয়ে কথা বলে। বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলা যাবে না। কে মাছ-মাংস খাবে তা ঠিক করে দিতে চাইছে ওরা। তবে বাংলা এসব মানবে না। সবার অধিকার এখানে রক্ষিত হবে। দিল্লিতে যমুনানগরে বাঙালিদের বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ভোটের আগে দলিত, মতুয়াদের বাড়ি যান বিজেপি নেতারা।'
বিজেপি নেতারা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গার সংখ্য়া বেড়েছে এরাজ্যে। তারা ভোটাধিকারও পেয়েছে। তারও প্রতিবাদ করেন মমতা। তাঁর দাবি, রাষ্ট্রসংঘ আগেই তথ্য দিয়ে জানিয়েছিল ১০ কোটি মতো রোহিঙ্গা আছে। অথচ এখব বিজেপি দাবি করছে ১৭ কোটি রোহিঙ্গা রয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? বাংলা ভাষায় কথা বললেই রোহিঙ্গা বলা হচ্ছে। এর বিচার কে করবে? প্রশ্ন মমতার। যদি রোহিঙ্গা থেকেও থাকে তার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের, দাবি করেন তিনি। জানান, বিএসএফ সীমান্তে দায়িত্বে থাকে। তারা তো রাজ্যের অধীনে নয়। কেন্দ্রের। তাহলে এর দায় বিজেপি পরিচালিত সরকারকেই নিতে হবে।
মমতার হুঙ্কার, বাংলা ভাষায় কথা বললে যদি কেউ গ্রেফতার হয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। সেই আন্দোলন দিল্লিতেও ছড়াবে। তিনি বলেন, 'বাংলায় কথা বলার জন্য যদি কেউ গ্রেফতার হয়, তাহলে ছেড়ে কথা বলা হবে না। আমি ধরলে ছাড়ি না। সেটা আপনারা জানেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন তো তার প্রমাণ।'
এরপরই 'ভাষা আন্দোলনের' ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ঘোষণা, 'আগামী ২৭ জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। বেশি করে বাংলা বলুন। কোনও ভাষার উপর আক্রমণ মানব না। নির্বাচনের ফলাফল না বেরেনো পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।'
তবে শুধু মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নন, আগামী ভোটে 'বাংলা ভাষা' যে প্রধান হাতিয়ার তা সাফ করে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, 'বাংলার মানুষকে এরা ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে যেতে চায়। বিজেপিকে প্রথম থেকেই আমরা বাংলাবিরোধী বলেছি। আজ থেকে ১৬-১৭ মাস আগে আমরা ব্রিগেডে সমাবেশ করেছিলাম। তাতে স্লোগান ছিল, জনতার গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন। সেই দিন আমরা যে ডাক দিয়েছিলাম, সেটা শুধু স্লোগান না, ওটা বিজেপির চরিত্র উন্মোচন। শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়। বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে তাচ্ছিল্য করে, ময়দানে জিততে না পেরে নির্লজ্জের মতো গরিব মানুষকে মারার পরিকল্পনা করে। টাকা আটকে রাখে। ওদের একটাই পরিচয়, বাংলাবিরোধী।'