তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে চিরাচরিত ভঙ্গিতে কেন্দ্রের সরকারকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে আগাগোড়াই BJP-কে আতক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। SIR থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালি ইস্যু, ১০০ দিনের কাজ থেকে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন, সব ক্ষেত্রেই মোদী-শাহের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। একইসঙ্গে মমতার নিশানায় এদিন ছিলেন বামেরাও। নানা ইস্য়ুতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির সমালোচনা করেন তিনি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিন একটি বারের জন্যও কংগ্রেসের নাম করে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করলেন না।
অভিষেকের নিশানা
এদিন সভামঞ্চে প্রথম বক্তব্য রাখতে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুরুটাই করেন আরজি কর আন্দোলনের এক বছর পার হওয়ার বিষয় উত্থাপন করেন। শুরু থেকেই তিনি তীব্র আক্রমণ করেন বাম-কংগ্রেসকে। অভিষেক বলেন, 'যারা এক বছর আগে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাত দখলে পথে নেমেছিলেন, তারা দোষীদের শাস্তির চেয়েও বেশি চেয়েছিলেন মমতার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে। আর অপরাজিতা বিলে যে রাষ্ট্রপতির সই এখনও বাকি তা নিয়ে তো কংগ্রেস-বামেরা কোনও কথা বলেন না।'
অভিষেকের ভাষণে একাধিকবার বাম-কংগ্রেস উচ্চারিত হয়েছে এদিন। তিনি বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই করার আগে আপনারা ছাত্র-যুবদের সঙ্গে লড়ুন। ১০-০ গোলে হারবে বাম-কংগ্রেস-BJP।'
মমতার মুখে নেই কংগ্রেস
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে কংগ্রেসের কথা শোনা গেল না এদিন। মমতা বলেন, 'কিছু হিংসুটে লোক আছে। দেখলেই জ্বলে, আর লুচির মতো ফোলে। এরা হচ্ছে তাই। সেলফিশ জায়েন্টেরা, যারা হাই লোডেড ভাইরাস, তারা হিংসা করে আমাদের টাকা বন্ধ করে দিয়ে ভাবছে NRC চালু করবে এবং সকলের ভোটাঅধিকার কেড়ে নেবে। জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কাড়তে দেব না।' বাংলার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইটা কার বিরুদ্ধে, এপ্রসঙ্গে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমোকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'তৃণমূলকে শুধু বাম-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় না। সব শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। ইলেকশন আসলেই দেখবেন এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে।' আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, 'আগে কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি কোনও রাজনৈতিক দল করত না।' বিশ্লেষকদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, কংগ্রেসের সময়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার ব্যবহার করা হত না, তেমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন মমতা।
নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত?
উল্লেখ্য, SIR ইস্যুতে INDIA জোটের অন্যতম দুই প্রতিনিধি দল কংগ্রেস এবং তৃণমূল একজোট হয়েই লড়ছে। সংসদে বিক্ষোভ দেখানোর ক্ষেত্রেও দুই দলের মধ্যে সম্বন্বয় দেখা গিয়েছে। রাহুল গান্ধীদের সঙ্গেই SIR-এর বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের মহুয়া, ডেরেক, সাগরিকাদের। পুলিশি বাধার মুখে তৃণমূলের মহিলা সাংসদের অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাহুলের তৎপরতা দেখেছে সকলেই। আবার প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের জেল হলে অপসারণ করার অধিকার বিল নিয়ে একজোট হয়েই বিক্ষোভ দেখিয়েছে হাত এবং জোড়াফুল প্রতিনিধিরা। এদিন এ প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'তৃণমূলের সাংসদদের প্রতিবাদের জেরেই অমিত শাহরে সংসদে ফোর্থ রো-তে গিয়ে বিল পেশ করতে হয়।' এই ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলের জেপিসি কমিটিতে কোনও প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। একে একে ব্যাকআউট করে অখিলেশ এবং লালুর পার্টিও। তারপরই কংগ্রেসের অন্দরে চাপ আসতে থাকে শীর্ষনেতৃত্বের উপর। বাকিদের পথে হেঁটেও কংগ্রেসও যাতে জেপিসিতে সামিল না হয়, সেই দাবি ওঠে।
এই মুহূর্তে বিহার নির্বাচনের প্রচার করতে ভোট অধিকার যাত্রা করছেন রাহুল গান্ধী। তার সঙ্গে সে যাত্রায় পা মিলিয়েছেন RJD নেতা তেজস্বী যাদব, DMK প্রধান স্ট্যালিন। জানা গিয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর সেখানে তৃণমূল প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি নতুন ইক্যুয়েশনের ইঙ্গিত মিলছে।
এদিকে, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী জোট হয় কি না, তা-ও বেশ কিছুটা অনিশ্চিত। কারণ কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার CPIM-এর সঙ্গে জোট কার্যত পত্রপাত খারিজ করে দিয়েছেন। তবে কি বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লির মতো বাংলাতেও কাছাকাছি আসবে কংগ্রেস-তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলে শুরু জল্পনা।