আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবারের দাবি, চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন কেনা নিয়ে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল থানায়। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই ব্যক্তিকে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকে। মৃতের নাম অশোক কুমার সিং (৪২)। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান পরিবারের লোকজনের। যার জেরে কার্যত অবরূদ্ধ কলেজ স্ট্রিট চত্বর। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যেতে হয় পদস্থ পুলিশ কর্তাদের।
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোন কেনেন অশোক সিং। সেটি চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন ছিল। ওই ফোন নিয়ে তাঁকে বিকেল ৫টা নাগাদ থানায় আসতে বলা হয়। পরিবারের এক মহিলা সদস্যকে নিয়ে সেই মতো এদিন থানায় যান অশোক। ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা থাকায় থানার ভিতরে ঢোকেননি তিনি। কিন্তু কিছু ক্ষণ পর বাড়ির লোকজন এসে দেখেন, থানার মেঝেতে পড়ে রয়েছেন অশোক। তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। এর পর পুলিশের তরফেই অশোককে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে অশোককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা এর পরই বিক্ষোভ এবং অবরোধে শামিল হন মৃতের পরিবার ও পরিজনরা। তাঁদের দাবি, থানায় ঢোকার আগে পর্যন্ত দিব্যি সুস্থ ছিলেন অশোক। ভিতরে ঢুকে কী করে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন তিনি? এই ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় ক্ষোভ আছড়ে পরে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার বিরুদ্ধে। কলেজ স্ট্রিট অবরোধ করেন মৃতের পরিবার এবং পরিজনরা। পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ উগরে দেন সকলে। গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে।
যদিও পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আমহার্স্ট থানার পুলিশ। তাদের দাবি, চুরির মোবাইল ফোন কেনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন অশোক। কোনও মারধর করা হয়নি। পরিবারের অভিযোগ একেবারেই সত্য নয় বলে জানিয়েছে তারা। কিন্তু পুলিশের এই দাবি মানতে নারাজ মৃতের পরিবারের লোকজন। এদিকে বৃহস্পতিবার নিউটাউনের ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কাজকর্ম ক্রমশ খুব বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে।
আমহার্স্ট স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে যা বললেন দিলীপ
বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কাজকর্ম ক্রমশ খুব বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই পুলিশকে নিয়ে চিন্তা আছে। সিপিএম আমলে পুলিশকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন গোটাটাই পুলিশ করছে। তৃণমূল পার্টি বলে কিছু নেই। পুলিশ টাকা তুলে দিচ্ছে। বিরোধীদের ঠান্ডা করছে। ফলে তাদের ওপর কোনো কন্ট্রোল নেই। যেখানে গণ প্রহারে লোক মরছে সেখানে পুলিশের দেখা নেই। যেখানে গুলি চলছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হচ্ছে, পুলিশের কোনো অ্যাকশন নেই, তাদের সামনে। আর এখানে, কার মোবাইল চুরি হয়েছে, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই লোককে ডেকে থানায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। পুলিশ কি মানবতা হারিয়ে ফেলেছে? এর পিছনে কী রহস্য? তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মানুষ ভয়ে আছে। দুষ্কৃকারীদের থেকে বাঁচতে মানুষ পুলিশের কাছে যায়। পুলিশ যদি এরকম অত্যাচার করে, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?
বাগমারি পিটিয়ে খুনের ঘটনা নিয়েও এদিন মুখ খোলেন দিলীপ ঘোষ। বলেন, মানুষ খুব অ্যারোগেন্ট হয়ে যাচ্ছে। হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। ছোট খাটো ঘটনায় মারাত্মক ভায়োলেন্ট হয়ে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলার কড়াকড়ি নেই। এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। স্কুল চত্বর, ক্লাব, মন্দিরে মদের বোতল পরে আছে। গ্যারাজে পানশালা বসানোর প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই মানুষের সুরক্ষা নেই? তখন পুলিশ কোথায়? পুলিশ পিটিয়ে মারছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার হলে পুলিশের দেখা মেলেনা।