সকাল থেকে ডিউটি করছিল প্রথমবার ইডেনে দায়িত্ব পাওয়া পাঁচবছর বসয়ী ঘোড়া 'ভয়েস অফ রিজন'। কিন্তু মুহূর্মুহূ বাজির শেলের কানফাটানো আওয়াজে ভয় পেয়ে ছোটাছুটি শুরু করে ঘোড়াটি। একটি গাড়িতে ধাক্কা খায়। তারপরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাউন্ডেড পুলিশ মাত্র ৬ মাস আগে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ওই ঘোড়া। ঘটনাটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। অভিযোগ ওই বাজি ইডেনের পার্কিং লট থেকে ফাটানো হয়েছিল।
রবিবার রাতে ইডেন গার্ডেনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ম্যাচ চলাকালীন ঘটনা। সূত্রের খবর, ম্যাচের পরে আতশবাজির শব্দ শুনে ঘোড়াটি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং দুর্ঘটনার আগে রাস্তার একাধিক গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘোড়াটির মৃত্যুতে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভয়েস অফ রিজন নামে এই ঘোড়াটির ভিসেরার নমুনা বেলগাছিয়ার একটি সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাউন্টেড পুলিশের একজন অফিসার বলেছেন, আস্তাবলের সবচেয়ে সুস্থ্য-সবল ঘোড়াগুলির মধ্যে একটি ছিল 'ভয়েস অফ রিজন।' প্রায় ছয় মাস আগে রেসকোর্স থেকে ঘোড়াটি উপহার হিসেবে পেয়েছিল পুলিশ।
আতশবাজি প্রদর্শনের আয়োজনকারী ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল সোমবার জানিয়েছে যে রবিবার ইডেন গার্ডেনের বাইরে আতশবাজি ফোটার জন্য তাদের কাছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং কলকাতা পুলিশের প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল। কিন্তু কলকাতা পুলিশ মঙ্গলবার বলেছে যে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালীন স্টেডিয়ামে নির্ধারিত বাকি দুটি ম্যাচের জন্য তারা এখনও CAB থেকে আতশবাজি সম্পর্কে কোনও তথ্য পায়নি।
কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের ইন্সপেক্টর অভ্র চট্টোপাধ্যায় 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে বলেন, 'সকাল থেকেই ২১টি ঘোড়া ডিউটি করছিল। সবকিছু সামলে নিয়েছিল। কিন্তু আচমকা পার্কিংলট থেকে বাজি ফাটান হবে, কেউ বুঝতে পারেনি। যেকারণেই ওইখানে থাকা ৬টি ঘোড়া ছোটাছুটি করতে শুরু করে। দুটো ঘোড়া জখম হয়। দুজন রাইডার হাসপাতালে ভর্তি। একজনের মাথায় সেলাই পড়েছে। এর আগে ইডেনে এই পরিস্থিতি হয়নি।'
আলিপুর বডিগার্ডস লাইনসের আস্তাবলে ৩৯টি ঘোড়া আছে। সেই আস্তাবলের ২২ নং স্টলে থাকত 'ভয়েস অফ রিসন'। তবে গত রবিবারের ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। জানা গিয়েছে, ইডেনের বাইরে ময়দান থেকে বাজি ফাটানোর জেরেই ঘোড়াগুলি সেদিন এত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।
অভ্র চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, 'চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মাউন্টেড পুলিশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল 'ভয়েস অফ রিসন' নামক ঘোড়াটি। এসএন ব্যানার্ডি রোডে দু'মাস প্রশিক্ষণ নেয় সে। খুব জলদিই পুলিশে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল 'ভয়েস অফ রিসন'। মারা যাওয়ার পর কলকাতা পুরসভা ওই ঘোড়া নিয়ে গেছে। ধাপায় নির্দিষ্ট জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে।'
পুলিশ জানিয়েছে, সেদিন সন্ধ্যা ৮টা ৩৩ মিনিট থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ১৫০টি বাজি পোড়ানো হয়েছিল। প্রতিটি ১২৫ ডেসিবেল আওয়াজের ছিল। 'ভয়েস অফ রিসন'-এর হ্যান্ডলার অনিমেশ চক্রবর্তী তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি পারেননি। পার্কিং লটের দিকে ছুটে চলা 'ভয়েস অফ রিসন' একটি গাড়ির খোলা দরজায় ধাক্কা খায়। তারপর উঠে সেই দরজায় লাথি মেরে ফের ছুটতে শুরু করে। এরপর অনেকগুলি বাইককে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটি। পরে পুলিশ 'ভয়েস অফ রিসন'-কে শান্ত করতে সক্ষম হয়। ততক্ষণে ঘোড়াটি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাকে সিপিআর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মারা যায়। সেদিন লেসলি ক্লডিয়াস শরণিতে নিযুক্ত আরও যে ঘোড়া ছিল - হিস্টোরিয়ান, আইকনিক এবং চন্দ্রগুপ্তও জখম হয়। হিস্টোরিয়ানের পা কেটে গিয়েছিল। আইকনিক নামক ঘোড়াটি এখনও আতঙ্কে আছে। আর 'ভয়েস অফ রিসন'-এর পাশের স্টলেই থাকত চন্দ্রগুপ্ত।
এদিকে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রুপ লিগের পরবর্তী ম্যচে (পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড) ইডেনে বাজি পোড়ানোর জন্য এখনও অনুমতি চায়নি সিএবি। এরপর ১৫ বা ১৬ নভেম্বর ইডেনে সেমিফাইনালও হওয়ার কথা। তার জন্যেও এখনও বাজি পোড়ানোর অনুমতি চাওয়া হয়নি। জানা গিয়েছে, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে এভাবে বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বিরাট কোহলির জন্মদিন উদযাপনের জন্যেই। সেদিন মাঠের বাইরে থেকে বাজি শূন্যে ছাড়া হয়েছিল। মাঠে অনেক ভিআইপি থাকায় ভিতরে বাজি পোড়াতে চায়নি সিএবি। আর সেই কারণেই সেদিন মাঠের বাইরে থেকে এই বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল পুলিশও।
পুলিশ জানাচ্ছে, এর আগে সবসময়ই ইডেনের ছাদ থেকে বা ইডেনের বাগান থেকে বাজি ছাড়া হত শূন্যে। তাতে অভ্যস্ত ছিল ঘোড়াগুলি। তবে সেদিন এত কাছ থেকে এত জোরে জোরে আওয়াজ হওয়ায় তারা সেটা নিতে পারেনি। পুলিশ দাবি করেছে, বাজি যে এভাবে মাঠ থেকে ছাড়া হবে, সেই নিয়ে তাদের কাছে কোনও খবর ছিল না।