
২০২২ সালের ২৩ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার হওয়ার ৬ দিনের মাথাতেই সরকার এবং দল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। আর মন্ত্রীও নন তিনি। তবে এখনও বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক। সূত্রের খবর, ৩ বছর ৩ মাস পর মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিধানসভা অধিবেশনে নির্দল বিধায়ক হিসাবে যোগদান করতে চান তিনি। অনুগামীদের হাতে হাতে দেখা গেল, 'বেহালা পশ্চিমে পার্থদাকে আবার চাই' পোস্টারও।
নির্দল বিধায়ক পার্থ!
জানা গিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইচ্ছে, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে নির্দল বিধায়ক হিসাবে বক্তৃতা দেবেন। তিনি এ-ও বলেন, ‘আমি বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। যাঁরা আমাকে সৎমানুষ মনে করেন, পরপর পাঁচ বার নির্বাচনে জিতিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাইতে যাব।’ সেক্ষেত্রে জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি দল সাসপেনশন না তুললে নিজের কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়?
ভোটে লড়বেন পার্থ?
বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তিনি। এই এলাকার একাংশ এখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বেহালার রূপকার মনে করেন। মঙ্গলবার তাঁর জামিনের পর কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় বহু অনুগামীকে। পোস্টার হাতে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফেরেন তাঁর নাকতলার বাড়িতে। ভিড় জড়ো হয় তাঁকে স্বাগত জানাতে। তিনিও অনুগামীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। বরণ করে তাঁকে ঘরে প্রবেশ করানো হয়। বাড়িতেও প্রচুর কর্মী-অনুগামীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে আবেগে ভেসে যান। সব মিলিয়েই তাঁর ফের ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। অনুগামীদের হাতে, পাড়ার মোড়ে দেখা যায়, 'বেহালা পশ্চিমে পার্থদাকে আবার চাই' পোস্টারও।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেই ৩ বছর আগে গ্রেফতার করা হয় তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও। অর্পিতার ২টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ৫০ কোটিরও বেশি টাকা। এরপর থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসে। ED এবং CBI এই মামলার তদন্ত করছে। অর্পিতার আগেই জামিন হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরা অবশ্য তাঁদের প্রিয় দাদাকে দোষী মানতে নারাজ। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, 'টাকা পার্থদার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়নি। কিছুই পাওয়া যায়নি ওঁর বাড়িতে। কার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে তা সবাই জানেন।'
পার্থর আক্ষেপ
জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলেও আক্ষেপ রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন, তৃণমল দলের সংবিধানের কোন ধারায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ওই চিঠি তিনি জেলে বসেই লিখেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, দলের কোন নিয়মবলে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে? চিঠিতে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে তাঁর গলা থেকে। পার্থর বক্তব্য, একইরকম অভিযোগে অভিযুক্ত দলীয় অনেক নেতার পাশে দল বহুবার দাঁড়িয়েছে। অথচ তাঁর বেলায় কেন অন্যথা হল?