কলকাতা শহরের গর্বের গণপরিবহণ ‘মেট্রো রেল’। চার দশকের পুরনো এই পরিষেবা আজও শহরবাসীর যাতায়াতের প্রধান ভরসা। কিন্তু কতদিন থাকবে, তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্নের মুখে গোটা পরিষেবা। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-দক্ষিণ করিডরে (ব্লু লাইন) নিত্য সমস্যা ও যান্ত্রিক ত্রুটি যাত্রীদের কাছে অসহ্য যন্ত্রণার যাত্রা হয়ে উঠছে।
গত শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত তিন দিনের ছুটির সময়ে মেট্রো পরিষেবা ছিল তুলনামূলক স্বাভাবিক। স্কুল-কলেজ বন্ধ এবং সপ্তাহান্তের কারণে ভিড়ও ছিল কম। মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেই সময়ে পরিষেবার মসৃণ চলার কথা ফলাও করে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার সকালেই ফের ভোগান্তির চিত্র। কবি নজরুল স্টেশনে একটি রেক খারাপ হয়ে যাওয়ায় টালিগঞ্জ থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে ঘোষণা হয় বিষয়টি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্লু লাইনের পরিষেবা ব্যাহত হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, শুধু রেক খারাপ নয়, বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছে ট্রেন। ময়দান স্টেশনে ঘোষণা করা হয় সিগন্যাল সমস্যার কারণে দেরি হচ্ছে। ভিড়ের চাপ এতটাই ছিল যে একাধিক মেট্রোয় দরজা বন্ধ করতেও অসুবিধা হচ্ছিল। ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের ব্যবধান বজায় রাখতে না পারায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
বরাহনগরের যাত্রী অমিত দাস জানান, 'বরাহনগর থেকে চাঁদনি চক পৌঁছতে ২৪ মিনিট লাগার কথা, অথচ সময় লেগেছে ৩৯ মিনিট। প্রতিটি বড় স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়েছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি। মাঝমধ্যে একআধ দিন মেট্রো ঠিকঠাক চললেই ফলাও প্রচার। আসলে ভালো সার্ভিসের মিথ্যে প্রচার করছে মেট্রো।'
নিত্যদিন এমন ভোগান্তির ফলে অনেক যাত্রীই সময় বাঁচানোর জন্য মেট্রোর উপর যে ভরসা করতেন, তা ক্রমে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। মৌমিতা সেনগুপ্ত নামে আর এক যাত্রী বলেন, ‘'আগে মেট্রো মানে ছিল গতি ও নির্ভরতার গ্যারান্টি। এখন তো উল্টো! দরকারি কাজে মেট্রোয় চড়ার প্রবণতা কমছে। কেউ জানে না কখন কোথায় আটকে পড়বে ট্রেন!'
ইস্ট-ওয়েস্ট (গ্রিন লাইন) বা নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর (ইয়েলো লাইন) মেট্রোয় অভিযোগ তুলনামূলক কম। কিন্তু দেশের প্রথম মেট্রোপথ উত্তর-দক্ষিণ লাইন নিয়েই যাত্রীদের ক্ষোভ চড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, নতুন লাইন সম্প্রসারণের উৎসাহ যখন যাত্রীদের মনে এতটাই ঝলমলে, তখন পুরনো ব্লু লাইন কেন এতটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ছে। কবে ঠিক হবে এই পরিস্থিতি?
সামনেই পুজো। এই সময়ে ভিড় ও যাত্রীর চাপ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারছে না তারা। ফলে ‘ভালো পরিষেবার প্রচার’ আর ‘বাস্তব ভোগান্তি’র ফারাক নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন নিত্যযাত্রীরা।