মেঝে সারানো করা, ফাটল মেরামত করা, এক শতাব্দীরও বেশি পুরানো টাইলস পরিষ্কার করা, গর্ভগৃহে দাগযুক্ত ফ্রেস্কো ফুটিয়ে তোলা —কালীঘাট মন্দিরের এসবেরই সংস্কার চলছে। মঙ্গলবার বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে তাঁর বক্তৃতার সময় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি মন্দির সংস্কারের বিষয়ে একথা জানিয়েছেন।
মুকেশ আম্বানি বলেন,"রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন বিখ্যাত কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার ও পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে... আমরা শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের কাঠামো-সহ পুরো মন্দির কমপ্লেক্স মেরামতের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।"
কালীঘাটে প্রায় ১০ ফুট গভীর একটি পুকুর রয়েছে। সেটি-সহ একটি জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়েছে৷ ট্যাঙ্কটিকে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাজেশ শুক্লা, কনসালট্যান্ট আর্কিটেক্ট, যিনি সংস্কারটির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “জলের গুণমান যাতে ভালো থাকে, সেজন্য আমরা একটি ফোয়ারা বসিয়েছি। আমরা জলের ট্যাঙ্কের চারপাশে মেঝে করার জন্য ২৫ মিমি-পুরু গ্রানাইট পাথরও ব্যবহার করেছি।”
এছাড়াও জলের ট্যাঙ্কের চারপাশের সীমানা প্রাচীরের ভিতরের দিকটি পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। টাইলসের ওপর তৈরি করা হয়েছে মহাবিদ্যাদের ছবি। তবে টেরাকোটা টাইলস এবং গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পার্থরঞ্জন দাস একজন সংরক্ষণ স্থপতি এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশনের সদস্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মেঝে তৈরির জন্য গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার প্রয়োজন ছিল না। তাঁর বক্তব্য, “কুণ্ড পুকুরের চারপাশে ইট ছিল। সংস্কারের জন্য গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রয়োজন ছিল না এছাড়াও, কুন্দো পুকুরের চারপাশের দেয়ালের ভিতরের দিকটি পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। কালীঘাট মন্দিরে পোড়ামাটির টাইলসের উপস্থিতি জানা যায়নি।”
শুক্লা অবশ্য বলেছিলেন যে, যখন তাদের প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়েছিল ৪.৫ মিটার উঁচু সীমানা প্রাচীর ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছিল। তাদের উপরিভাগ শুধুমাত্র প্লাস্টার করা ছিল এবং জায়গাটির সাথে তাল মিলিয়ে দেখছে না। রাজ্য সরকার এবং পুরসভা রিলায়েন্সকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত মন্দির কমপ্লেক্সের সংস্কারটি পুরসভাই করছিল।
কেএমসি এখনও মন্দির কমপ্লেক্সের বাইরের এলাকার সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত। এটি একটি ৪৩০ মিটার দীর্ঘ স্কাইওয়াকও তৈরি করছে যা এসপি মুখার্জি রোডকে মন্দিরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। মূল মন্দির ছাড়াও কমপ্লেক্সে একটি জোড়া শিব মন্দির, আরেকটি শিব মন্দির, একটি রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং কয়েকটি অন্যান্য কাঠামো রয়েছে। সেগুলির ক'য়েকটির অবস্থা খারাপ।
মন্দিরগুলির একটি মূল্যায়ন করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দীপেশ মজুমদার। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। মন্দির, গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির, কুণ্ডপুকুর, মন্দিরের চাতাল-সহ ভিতর এবং বাইরের দেওয়াল, বলির জায়গা-সহ গোটা মন্দির চত্বর সংস্কার করছে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। তবে সংস্কারের যাবতীয় কাজ হবে কালীঘাট মন্দিরের ঐতিহ্য বজায় রেখেই। মা কালীর গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির গ্রেড ‘এ’ হেরিটেজের তালিকাভুক্ত। তাই সংস্কারের জন্য কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি ও হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি প্রয়োজন ছিল। তা-ও মিলেছে।