আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর গোটা শহর প্রতিবাদে সরব হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক প্রতিবাদী পোস্ট নজরে আসছে সকলের। পিছিয়ে নেই টলিউড তারকারাও। একপ্রস্থ প্রতিবাদে মুখরিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে এক অন্য ধরনের প্রতিবাদের কথা শোনা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। যেখানে বলা হচ্ছে রাতে মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে এবার মেয়েদেরকেই রাস্তায় নামতে হবে। আর এর সমর্থনে একের পর এক পোস্ট করছেন টলি তারকারা।
বিদিপ্তা চক্রবর্তী
কোনওদিনই কোনও অন্যায় সহ্য করেননি বিদিপ্তা। আর শহরে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘৃণ্য এক ঘটনা ঘটে যাওয়ায় চোখ ফিরিয়ে থাকতে পারেননি। বিদিপ্তা তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, আসুন ছোটো বড়ো সব বয়সের মেয়েরা পালা করে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ি মধ্য রাতের শহরগুলোতে... ঘুরে বেড়াই। কেন আমরা সবাই জানি। সেসব নিয়ে কথা বলার সময় নেই আর। আসুন, আমরা কলকাতাকে কয়েকটা zone এ ভাগ করে এক এক দিন এক একটা জায়গায় কিম্বা একই সঙ্গে অনেক zone (যদি আমরা সংখ্যায় বেশি হই) ছড়িয়ে পড়ি। রাত এগারোটা থেকে একটা - আপাতত শুধু এটুকু বলার জন্য যে এ শহরে আমরা আছি - দিনে রাতে কাজ করছি, ক্লান্ত হচ্ছি, আনন্দ করছি, কষ্ট করছি এইখানেই। এটা কোনো বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নয়, কোনও স্লোগানের প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই। আমিও আছি। আমার মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে। আর যে যে পারবেন চলুন। এটা বোঝা যাচ্ছে না যে হাসপাতালে, হোটেলে, রেল স্টেশনে, এয়ারপোর্টে, অলিতে-গলিতে মেয়েরা রাতেও থাকে। তাই....। আর এই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতেই স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট যাদবপুর ৮বি, অ্যাকাডেমি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে মেয়েদের। বিদিপ্তার এই পোস্ট ঝড়ের গতিতে শেয়ার হয়েছে।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এই ঘটনা ঘটার পর থেকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট দিয়ে স্বস্তিকা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনিও এই ঘটনার সুবিচার চান। স্বস্তিকাও ১৪ অগাস্টের রাতে থাকছেন সব মেয়েদের সঙ্গে। স্বস্তিকা পোস্ট করেছেন, রাতের রাস্তায় মেয়েদের জমায়েত (১) ১৪ অগাস্ট রাত এগারোটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে।
মিমি চক্রবর্তী
অন্যায়ের প্রতিবাদে পিছপা হন না মিমি চক্রবর্তী। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর নায়িকা কী বলছেন, জানার জন্য উদগ্রীব ছিলেন তাঁর অনুরাগীরা। রবিবার মিমি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে সরব হন। তিনি লেখেন, “আরজি কর-কাণ্ডে অপরাধীর এমন শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ফের এই ধরনের জঘন্য অপরাধের কথা ভাবলেই ভয়ে মেরুদণ্ড কেঁপে ওঠে।” তাঁর মতে, এই নারকীয় ঘটনার জন্য কেউ সন্তানহারা হলেন। কারও স্বপ্ন অকালে ঝরে গেল। কোনও পরিবার অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হল। তার পরেই তিনি মৃতার উদ্দেশে করে লেখেন, “বিষয়টি ক্ষমার অযোগ্য, তোমার পাশে আছি।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
শনিবার একই ভাবে সমাজমাধ্যমে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লেখেন, “আর কত আঘাত পাবে পরিবারগুলো? কলেজ, হাসপাতাল কোথাও কি নিরাপত্তা নেই ? এই ভাবে মৃত্যু? কেন? কী এর ব্যাখ্যা? হতাশ আমরা ... ক্ষুব্ধ... এত অন্যায় কেন ?” তাঁর হাহাকার, “নিষ্পাপ মেয়েটি আর ফিরবে না! কী দোষ ছিল মেয়েটির? এক জন চিকিৎসকে হারালাম... এত হিংস্রতা কেন?”
সৃজিত চক্রবর্তী
প্রতিবাদী বার্তার পাশাপাশি ‘বিচার চাই’ কথাটিও জ্বলজ্বল করছে প্রত্যেকের সমাজমাধ্যমে। সৃজিত লেখেন, “আমার শহর কুণ্ঠিত বড়, ক্ষমা করো তুমি মেয়ে; পুরুষ বলেই গাইছি এ গান, শুধু মার্জনা চেয়ে...”। স্বস্তিকার আর্তি, “ভাষা নেই নিন্দের। এই দোষীদের অন্তত সাজা হোক। এ বার আর মেয়েটার দোষ, সে ভুল ভাবে, ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় ছিল বলে তার দিকে আঙুল তুলব না।” তার পরেই তাঁর প্রশ্ন, “একটা হাসপাতালেও মেয়েরা নিরাপদ নয়? যাব কোথায়?
১৪ অগাস্ট যাদবপুর ৮বি, অ্যাকাডেমি-নন্দন চত্ত্বর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট (কলেজ স্কোয়ার) শহরের এই তিন জায়গায় রাত ১১টার সময় সব মেয়েদের জমায়েত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। আর এখান থেকেই শুরু হবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরুণীর জন্য বিচার চাওয়ার নয়া উদ্যোগ।