
কলকাতায় লিওনেল মেসির (Lionel Messi) প্রত্যাবর্তন ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তা শুরুতে ছিল উৎসবের মতো। কিন্তু সেই উৎসবই মুহূর্তে বদলে যায় বিশৃঙ্খলায়। ‘গোট ট্যুর’-এর অংশ হিসেবে শনিবার কলকাতায় এসে মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যেই সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। কেন এমন হল, তার নেপথ্যের কারণ ধীরে ধীরে সামনে আসছে।
শনিবার সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেন ফুটবলপ্রেমীরা। সকাল আটটা নাগাদ গেট খোলার পর থেকে গ্যালারি ভরতে থাকে। চড়া রোদে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বেলা ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ মেসি মাঠে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পল। গ্যালারি জুড়ে তখন উচ্ছ্বাস, করতালি, স্লোগান।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় মাঠের মধ্যেই। মেসি নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ঘিরে ধরেন নেতা-মন্ত্রী, ভিভিআইপি, পুলিশকর্তা এবং তাঁদের সঙ্গীরা। নিরাপত্তার চাদরের চেয়েও বেশি তৈরি হয় এক ‘মানবপ্রাচীর’, যার আড়ালে কার্যত আড়ালেই থেকে যান মেসি। গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখার কোনও সুযোগই পাননি বেশিরভাগ দর্শক।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবার মাইকে অনুরোধ করেন অনুষ্ঠানের প্রোমোটার শতদ্রু দত্ত। মাঠ ফাঁকা করার আবেদন জানানো হয়, মেসিকে জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সেই অনুরোধ কার্যত উপেক্ষিতই থেকে যায়। উলটে ভিড় আরও বাড়তে থাকে, অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই মেসি কিছুটা বিস্মিত, কিছুটা অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে মাঠে ঘোরার চেষ্টা করেন। প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন, স্বাক্ষর দেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মেসির টিম সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁকে আর মাঠে রাখা নিরাপদ নয়।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই মেসিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার পরই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়েন। চেয়ার, বোতল ছোড়া, ফেন্সিং ভাঙা-সব মিলিয়ে যুবভারতী কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
একাধিক সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মেসিকে আরও কিছুক্ষণ থাকার অনুরোধ করেছিলেন। আয়োজকরা, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিপি রাজীব কুমারও মেসির টিমের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও অবকাশ ছিল না।
ফলে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই হায়দ্রাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন মেসি। যা হওয়ার কথা ছিল উৎসব, তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল বিশৃঙ্খলার এক দুঃখজনক অধ্যায়।