একদিকে ১৫ বছরের পুরনো বাস বন্ধের নির্দেশ। অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে নতুন বাস কেনায় অনীহা। দুই জাঁতাকলের মাঝে বাস মালিকরা। কলকাতা ও শহরতলির রাস্তায় কমছে বাসের সংখ্যা। বাড়ছে নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা।
যদিও এখনও কোনও কোনও বাস মালিক পুরনো বাস নিয়েই আশায় বুক বাঁধছেন। হাওড়া স্টেশনের বাস ডিপোয় বাস চালকরা জানালেন, 'পুরানো বাস তো বন্ধের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস বন্ধ হলে কী করে চলবে? শুনছি তো এটা আবার বাড়ানো হবে।'
বাড়ানো হবে?
নভেম্বরের শুরুতেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাস মালিকরা। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, ১৫ বছরের পুরানো বাস আর চালানো যাবে না। এই রায়ের বিরুদ্ধেই আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বিজ্ঞপ্তি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেন। এর জন্য ৪ সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেন। অর্থাৎ, ডিসেম্বরের শুরুতেই মিলতে পারে উত্তর। আর সেই কারণেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন বাস মালিকরা।
বাস মালিকরা কী যুক্তি দিচ্ছেন?
শুধু বাস মালিকরা নন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা চাইছেন চালক-কন্ডাক্টররাও। তাঁরা বলছেন, এর সঙ্গে তাঁদের রুজি-রুটি, সংসার জড়িয়ে। হঠাৎ বাস বন্ধ হলে সেক্ষেত্রে তাঁদের নতুন জীবিকা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।
বাস বন্ধের পিছনে পরিবেশ আদালতের মূল কারণটাই ছিল দূষণ। শুধু বাসই নয়, যে কোনও ইন্টারনাল কম্বাশচন ইঞ্জিন যত পুরনো হয়, তার এফিসিয়েন্সি বা কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে ক্ষয় হয়। এর ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়, তেমনই এর থেকে আরও বেশি-বেশি পরিমাণে দূষিত ধোঁয়া নির্গত হয়। এই ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা মাথায় রেখেই পরিবেশ আদালত এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
বলা হয়, ১৫ বছরের (২০০৮ সাল থেকে প্রযোজ্য) বেশি পুরানো বাস আর রাস্তায় নামানো যাবে না।
এর বিপক্ষে কী যুক্তি দিচ্ছেন বাসমালিক-চালকরা?
১. নতুন BS6 গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সামর্থ্য তাঁদের নেই। এমনিতেই বাসের ভাড়া বাড়ছে না। ফলে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মুনাফা করা দিন-দিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
২. করোনার সময় প্রায় দেড়-দুই বছর বাস অনেক কম চলেছে। এতে একদিকে তাঁদের আয়ে প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে ইঞ্জিনের ক্ষয়ও সেই দুই বছর কম হয়েছে। ফলে আদতে ১৫ নয়, তাঁদের বাসের ইঞ্জিন ১৩-সাড়ে ১৩ বছরই ব্যবহার করা হয়েছে।
৩. এমনিতেই রাজ্যের বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। টোটো, মেট্রো, অটোর প্রভাবে বাসের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।
পরিবহণ দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার আগে কলকাতায় বেসরকারি বাস ছিল ৪,৮৪০টি। মিনিবাস ছিল ২,০৬৪টি।
বর্তমানে শহরে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ৩,৬১৫টি। মিনিবাসের সংখ্যা ১,৪৯৮টি।
এর প্রেক্ষিতে, বাসের সংখ্যা কম থাকায় সার্বিকভাবে কম ধোঁয়া নিঃসরণ হচ্ছে বলে দাবি বাস মালিকদের।
আপাতত বিজ্ঞপ্তি পুনর্বিবেচনা করা হয় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে বাস মালিক-চালকরা।