কসবা ডিআই অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এক শিক্ষককে লাথি মেরেছে পুলিশ। সেই লাথি মারার ভিডিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। আর তারপরেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। বিরোধীরা এনিয়ে সরকার ও কলকাতা পুলিশের তীব্র সমালোচনা করেছে। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায় তাই হালকা বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের তরফে সর্বোচ্চ স্তর থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, লাথি মারা কাঙ্খিত নয়। তবে, এটা কেন হয়েছে তা জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।
আজ রাজ্যজুড়ে ডিআই অফিস অভিযানে গিয়েছিলেন এসএসসি চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কসবার ডিআই অফিসেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা গিয়েছিলেন। আর সেখানেই পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে চাকরিহারাদের ওপরে। শিক্ষিকাদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আজ চাকরিহারাদের বাধা দিতে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়েছিল। সেই ব্যারিকেড টপকে ডিআই অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। সেই সময় চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। দাবি, পুলিশের লাঠির মারে আহত হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ দাবি করছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষকরা আগে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কলকাতা পুলিশের তরফে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়েছে, আজ কসবা ডিআই অফিসের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে যে, প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা, বিনা উসকানিতে পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং হিংসাত্মক আচরণ করে, যার মধ্যে মহিলা পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন। চারজন পুরুষ পুলিশকর্মী এবং দুইজন মহিলা পুলিশকর্মী আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগ করে।এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।'
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। মনোজ পন্থ বলেন, 'জেলা ও কলকাতায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কসবা ডিআই অফিসে শিক্ষকরা গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষিক শিক্ষিকাদের সঙ্গে সভা করেছিলেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। তাঁদের আশ্বস্থ করা হয়েছিল। সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে। মানবিক ভাবে সমাধান করা হচ্ছে সরকারের তরফে। আইনি দিক রয়েছে। আমরা সব দিক থেকেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। মুখ্যমন্ত্রী সেই কথা বলেছিলেন। কারও কথায়, কারও প্ররোচনায় এটা ঘটেছে। অনেক জায়গায় দেখেছি শিক্ষকার স্কুলে গিয়ে পড়াচ্ছেন। আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে কোর্টে পিটিশন ফাইল করা হয়েছে। আমরা রিভিউ পিটিশন তৈরি করছি। আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছ। শীঘ্রই রিভিউ পিটিশন ফাইল করব। আমাদের সরকার চাকরিহারাদের সঙ্গে আছে। সরকার সব রকম সাহায্য করবে। আমরা তাঁদের কষ্টটা বুঝছি। সবার পারিবারিক বিষয় রয়েছে। যে যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার সেটা নেওয়া হবে। এরকম কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা সবাইকেই দেখতে হবে। সবাইকে অনুরোধ করব শান্তি শৃঙ্খলা মেনে চলুন। আইনের মাধ্যমে আমরা এই সমাধান চাইছি। পারস্পারিক বিশ্বাস রাখতে হবে।'
লাঠিচার্জ করা বা প্রয়োজনে আটক বা গ্রেফতার করা যেত, কিন্তু এক শিক্ষককে পুলিশ লাথি মারছে, এটা কি ঠিক হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মনোজ পন্থ বলেন,'পুলিশ বাধ্য হয়েই পদক্ষেপ নিয়েছে। সিনিয়র সার্জেন সিরিয়াসলি আহত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা কোনও ভাবেই কাঙ্খিত নয়। আমরা সকলেই তাঁদের রেসপেক্ট করি। ওনাদের চিন্তা আছে, আমাদেরও চিন্তা আছে। আমাদের চেষ্টার ওপরে ভরসা বিশ্বাস, আস্থা রাখতে বলছি।'
এই বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন,'পুলিশকে না জানিয়েই কসবা ডিআই অফিসে গিয়েছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। তাঁদের অনুরোধ আইন শৃঙ্খলা নিজেদের হাতে নেবেন না। আমরা নিজেদের হাতে আইন নিতে পারি না। দরকারে পুলিশকে জানিয়ে যান। লাথি মারা কাঙ্খিত নয়। আমরা টোটাল ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। সেখানকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা রিপোর্ট দেবেন আমাদের। সংবাদমাধ্যমে ভিডিওর একটা পার্ট দেখানো হচ্ছে। অন্য পার্টটা থেকে কমপ্লিট চিত্রটা উঠে আসবে। পুরো ঘটনা কাঙ্খিত নয়। কেন লাথি মারা হল তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। জানতে হবে কেন পুলিশ অ্যাকশন নিতে বাধ্য হয়। রিপোর্ট এলেই যা করার করণীয় সেটা করা হবে।'