চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করতে ঠিক বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ নেতাজি ইন্ডোরে পৌঁছে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সময়ের আগেই বৈঠক শুরু হয়ে যায়। মন দিয়ে চেয়ারে বসে চাকরিহারাদের কথা শোনেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তারপর আশ্বস্ত করেন, বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না।
নেতাজি ইন্ডোরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের সকলকে সঙ্কটের মধ্যে এসে দাঁড় করিয়েছে। ভাববেন না আমরা এটাকে ভাল করে মেনে নিতে পেরেছি। আসল কথা বলায় আমাকে জেলেও ভরে দিতে পারে। আমি কেস স্টাডি করে দেখছিলাম। ভাইস চ্যান্সেলাররা রয়েছেন, আপনাদের সাপোর্ট দিতে এসেছেন। সুপ্রিম কোর্ট জানাতে পারেনি, কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য। আইনে বলা রয়েছে, ১০ হাজার অপরাধী সাজা পেয়ে যাক, এক জন নিরপরাধও যেন সাজা না পান। ২০২২ সাল থেকে একটা নোংরা খেলা শুরু করেছিল। চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। চাকরি কাড়ার যাঁদের ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের আমি ধিক্কার জানাই। কোনটা মুখ, কোনটা মুখোস, সেটা জানতে হবে। প্রথমে সিঙ্গল বেঞ্চে, অভিজিতবাবুর বেঞ্চে, একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির লিস্ট বাতিল করা হয়। তারপর ডিভিশন বেঞ্চে, সবটাই করা হয়। সিবিআইকে কেস দেওয়া হয়। সিবিআইকে সাহায্য করি, বলি বাছুন, কে যোগ্য, কে অযোগ্য। বলছে ছাব্বিশের ভোটের পর চাকরি করে দেব, আগে একটা কথা আমি আপনাদের বলি, তারপর আমি কী করতে পারি, সেটা আপনাদের বলব। কয়েক দিন ধরে আমাকে… যে মানুষটা জানে না কী হয়েছে, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি… আমি আমার জীবনে জেনেশুনে কারোর চাকরি খাইনি, অনেক বদহজম হওয়া সত্ত্বেও সিপিএমের একটা চাকরিও খাইনি।
সিপিএমকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি অনেক কথা জেনেও সিপিএমের কারও কোনও চাকরি খাইনি। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন মামলা করলেন? উত্তর দিতে হবে। সিপিএমকে এর জবাব দিতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “চ্যালেঞ্জ করে বলছি আমি জেনেশুনে কাউকে শাস্তি দিইনি। কারও চাকরি খাইনি। আমি বলেছিলাম, বদলা নয়। বদল চাই। কেন মামলা করলেন? ভুল হতে পারে। ভুল সংশোধনের জন্য সময় দিন। ভুল করা অধিকার। ২০২৪ সালে নির্বাচনের সময় দুর্গাপুরে মিছিল করছিলাম। আমার কাছে খবর এল সুপ্রিম কোর্টে আমরা যখন আপিল করেছিলাম হাই কোর্টের রায়টাকে স্থগিতাদেশ দিতে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় করে দেন। আরেকজন প্রধান বিচারপতি এলেন যোগ্য, অযোগ্য না দেখে প্যানেল বাতিল করে দিলেন।”
চাকরিহারাদের আশ্বস্ত রে মমতা ব্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “যোগ্যদের চাকরি কাড়তে দেব না, এটা আমার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। যাঁরা ভালো রেজাল্ট করে এসেছেন তাঁদের চোর বলছেন?” এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি আমি জীবনে জেনে শুনে কারও চাকরি খাইনি। তাই অনেক বদহজম হওয়া সত্ত্বেও সিপিএম-এর কারও চাকরি খাইনি।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম ৩৪ বছর অনেক অন্যায় করে গিয়েছে। কারণ আমি বলেছিলাম, বদল চাই, বদলা নই। তুমি গিয়ে কেন অ্যাপ্লাই করলে? বিকাশভট্টাচার্যকে প্রশ্ন মমতার। কেন সমস্ত তালিকা বাতিল করেছে? আজকে বাইরে আমার নামে বড় বড় কথা বলছো। আমি তো চাকরিগুলো দিয়েছিলাম। আমার সরকার দিয়েছিল। এক দুটো কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। সেই ভুল সংশোধনের জন্য প্রশাসনকে সময় দাও। তা তো দাওনি। রাইট টু মেক ব্লান্ডার্স! নেতাজি বলেছিলেন, ভুল করাও অধিকার। যদি কারোর ভুল হয়ে থাকে, সংশোধন করার দায়িত্ব কার? কোর্ট যদি প্রশাসনকে সেই দায়িত্ব দিত, প্রশাসন নিশ্চয়ই সেই কাজটা করতে পারত।