১৯০২ সালের ৪ জুলাই ইহলোক ত্যাগ করেন স্বামী বিবেকানন্দ। মৃত্যুর সেই মুহূর্ত কেমন ছিল, কী কথা বলেছিলেন স্বামীজি, কী করেছিলেন? এসব তথ্য হয়তো অনেকের জানা নেই। তবে জানলে অবাক হবেন। তিনি যে যুগপুরুষ তার প্রমাণ মৃত্যুর দিনও রেখে গিয়েছেন। স্বামীজি বুঝতেই পেরেছিলেন তাঁর মৃত্যু আসন্ন।
বিবেকানন্দের মৃত্যুর পর ৭ অগাস্ট স্বামী সারদানন্দ এক চিঠিতে জানান, স্বামীজির মৃত্যু অদ্ভূত। মৃত্যুর ২ মাস আগে তিনি কাশী গিয়েছিলেন। সেখানে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঠে তাঁর চিকিৎসা হয়। পা ফোলা ভাব সেরেও ওঠে। তারপর তিনি ভোরবেলা জপ করতেন। আর বারবার বলতেন, 'আমার মৃত্যু শিয়রে। কাজকর্ম ও খেলা ঢের করা গিয়েছে।'
৪ জুলাই রাত ৯.০২ থেকে ৯.১০ এর মধ্যে ইহলোক ত্যাগ করেন স্বামীজি। সেই সময় একবারের জন্য তাঁর মাথা নড়ে ওঠে। বালিশ সরে যায় মাথা থেকে। সে সময় বিবেকানন্দের মুখে ছিল আশ্চর্যরকম জ্যোতি ও হাসি। তার আগে সন্ধে ৭ টা নাগাদ স্বামীজি নিজের ঘরে গিয়ে মালা জপ করতে শুরু করেন। বাঙাল ব্রজেন্দ্রকে বলেছিলেন, 'আমি না ডাকলে আসবি না।' তারপর ৭.৪৫ মিনিট নাগাদ সেবককে বলেন, তাঁর পা টিপে দিতে। তারপর তিনি শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেন। তারপর ৯.০২ মিনিট থেকে ৯.১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।
শুধু তাই নয়, মৃত্যুর ঠিক একবছর আগে ঢাকায় একটি সভা থেকে স্বামীজি জানিয়েছিলেন, তিনি আর এক বছর বাঁচবেন। এমনকী মৃত্যুর ঠিক ৩ দিন আগে সেবকদের আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দেন কোথায় তাঁর দেহ সৎকার করতে হবে। সিস্টার নিবেদিতা স্বামীজির মৃত্যুর পরে জানান, স্বামীজি মৃত্যুর আগে একজনকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত।
১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দত্ত পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্ধমানে কালনা মহকুমার দত্ত ডেরেটোনা গ্রাম। ১৮৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্রনাথের গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা নরেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীদের আঁটপুর গ্রামে আমন্ত্রণ জানান। তাঁরা সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করে হুগলি জেলার আঁটপুরে যান এবং কিছুদিন সেখানে থাকেন। সেখানেই আটজন আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।