Kolkata Trams: চলতি বছরের অগাস্ট মাসে হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পেয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম। যদিও ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও যথেষ্ট টানাপোড়েন চলছে। ৩০ রুটের মধ্যে মাত্র ৩টি রুটেই চলছে ট্রাম। এরই মধ্যে ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়। যদিও ওই মামলার শুনানিতে কার্যত হাইকোর্টের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে।
ট্রাম গতিতে পুলিশি আপত্তি
সোমবার ওই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষে জানানো হয়, কলকাতা পুলিশ ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করেছে। পুলিশের যুক্তি, ট্রামের ধীর গতির জন্য ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট। সোমবার ওই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন যে, পুলিশ একা ট্রাম চালানোর ক্ষেত্রে বিরোধিতা করতে পারে না।
কলকাতার যানবাহনের গড় গতিবেগের চেয়ে জোরে ছোটে ট্রাম
শহরের ঐতিহ্য-ইতিহাস মাখা ১৫০ বছরের এই গণপরিবহণ মাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন, সেই সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন (CTUA)-এর একজন অন্যতম সদস্য সাগ্নিক গুপ্ত জানান, ২০১৭ সালে ট্রামের মোট ৬টা ডিপো এবং ২৫টি রুট সক্রিয় ছিল। বর্তমানে ট্রামের মাত্র ২টি ডিপো এবং ৩টি রুট কোনও রকমে চলছে। পুলিশ বলছে, ট্রামের ধীর গতির জন্য ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, যানজট সৃষ্টি হয়। যদিও বাস্তবে ট্রাম প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে, যেখানে কলকাতার যানবাহনের গড় গতিবেগ ১০-১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
সমস্যা কোথায়?
সাগ্নিক বলেন, “আগে কলকাতায় ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রামলাইন ছিল, যা এখন কমতে কমতে মাত্র ৩৩ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। শহরের ৩০টি রুটেই ট্রাম চালানোর পরিকাঠামো রয়েছে। তবুও নানা যুক্তি-অজুহাতে তার মধ্যে ২৭টি রুটেই ট্রাম চালানোর অনুমতি দেয় না কলকাতা পুলিশ।” তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে কেএমডিএ, কেএমসি, আরভিএনএল, কলকাতা পুলিশ কলকাতায় ট্রাম চালানো নিয়ে তাদের নানা সমস্যা ও আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তবে গত অগাস্টে কলকাতা হাইকোর্ট কমিটি গড়ে দেওয়ার পর একমাত্র কলকাতা পুলিশ ছাড়া সকলেই শহরে ট্রাম চালানোর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ট্রাম বাঁচিয়ে রাখতে হাইকোর্ট যে কমিটি গড়েছিল সেই কমিটির সদস্য এবং ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন (CTUA)-এর সভাপতি দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “আদালত চায় শহরের সবকটি রুটেই ট্রাম পরিষেবা ফের চালু হোক। তার জন্য যা যা করণীয়, তা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে কিছু ভুয়ো রিপোর্ট আর বাজে যুক্তিতে শহরে ট্রাম চলতে দিচ্ছে না কলকাতা পুলিশ। বারবার মামলা করে শুধু সময় নষ্ট করছে।”
ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চালু হবে কবে?
ট্রাম বন্ধের মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পরের দিনই (মঙ্গলবার) পরিবহণ দফতর কলকাতার চারটি রুটে ট্রাম চালানোর কথা জানায়। বর্তমানে টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা আর শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলার মধ্যে ট্রাম চলছে। বিগত বছর দুয়েকে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চালানো প্রচুর সরকারি প্রতিশ্রুতি মিললেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ওই রুটে মেট্রোর নির্মাণকাজ না হলে দ্রুতই ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে ট্রাম চালানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পরিবহণ দফতর।
২০১৭ সালে ট্রামের মোট ৬টা ডিপো এবং ২৫টি রুট সক্রিয় ছিল। বর্তমানে ট্রামের মাত্র ২টি ডিপো এবং ৩টি রুট কোনও রকমে চলছে। আগামী দিনে হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতায় ট্রামের চাকা কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় শহরের ট্রাম-প্রেমী মানুষ।