বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য সম্প্রতি সংসদে লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, তসলিমাকে সুরক্ষিতভাবে কলকাতায় আশ্রয় দেওয়া হোক। সাংসদের এই মন্তব্যে তসলিমা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে এই বিষয়ে মুখ খোলেন গায়ক-সঙ্গীতকার কবীর সুমনও। তসলিমাকে নিয়ে তাঁর তীব্র মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে লেখিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা আক্রমণ শানান।
সুমনের প্রশ্ন: তসলিমা বাংলাদেশে ফিরতে চান না কেন?
বিজেপির উদ্যোগে তসলিমার কলকাতা ফেরার দাবি তুলতেই কবীর সুমন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, "তসলিমা কলকাতায় ফিরতে চান, কিন্তু বাংলাদেশে ফিরতে চান না কেন?" সুমনের এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তসলিমা। মঙ্গলবার তিনি ফেসবুকে লেখেন, "আমি ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছি, অথচ আমাকে ফিরতে দেওয়া হয় না। এটা সুমন জানেন না? জানেন, কিন্তু না জানার ভান করেন।"
সুমনকে 'জিহাদি' তকমা দিলেন তসলিমা
তসলিমা আরও লেখেন, কবীর সুমন এখন হঠাৎ করে কাঁটাতারের পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখিকা বলেন, "তুমি কি মানবাধিকারে বিশ্বাস করো? বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো? তোমরা মন্দ কাজ করবে, প্রতারণা করবে, আর কেউ যদি সেই মুখোশ খুলে দেয়, তাকে শূলে চড়াবে! এটাই তো টক্সিক মাস্কুলিনিটি!"
সুমনকে একহাত নিয়ে তসলিমা লেখেন, "কী করে এত ক্ষুদ্র, স্বার্থপর, হীন, অমানবিক মানুষটি সমানাধিকারের গান লিখেছিলেন! কীভাবে ঈশ্বরকে অস্বীকার করা মানুষটি জিহাদির মতো আচরণ করেন?"
সেক্যুলারিজম থেকে জিহাদির ভূমিকায়?
তসলিমা দাবি করেন, কবীর সুমন একসময় তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। তখন তিনি কলকাতাকে লেখিকার জন্য নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর সুর বদলে গেছে। লেখিকার কটাক্ষ, "একসময় সেক্যুলারিজমের কসম খাওয়া মানুষটি আজ জিহাদি হয়ে উঠেছেন!"
সুমনের ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং পাল্টা জবাব
তসলিমা এও মনে করিয়ে দেন, কবীর সুমন বাংলাদেশে গান গাইতে যান, তখন তাঁকে বাংলাদেশ বিদেশ বলে মনে হয় না। অথচ তসলিমা কলকাতায় এলে তিনি আপত্তি জানান। লেখিকার তির্যক মন্তব্য, "দুজন বাংলাদেশি নারীকে বিয়ে করেছ, তখন তো বিদেশি বলে দূর দূর করনি!"
কলকাতায় ফেরার আশায় তসলিমা
বিজেপি সাংসদের কলকাতায় ফেরার আহ্বান প্রসঙ্গে তসলিমা লেখেন, তিনি নিজে কলকাতায় ফেরার দাবি করেননি। কিন্তু একজন সাংসদ তাঁর হয়ে সওয়াল করায় কলকাতার কিছু 'জিহাদি' আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি মৌলবাদীরা তাঁকে দেশে ফিরতে দিতে চায় না, আর পশ্চিমবঙ্গের মৌলবাদীরাও তাঁকে কলকাতায় ফিরতে দিতে চায় না।
ফিরবে কি তসলিমা?
তসলিমা ও কবীর সুমনের এই তীব্র বাদানুবাদে বিতর্ক ছড়িয়েছে। লেখিকা কি আদৌ কলকাতায় ফিরতে পারবেন, নাকি এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আবারও নির্বাসিত জীবন কাটাতে হবে—সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।