আয়োজন নেই। লোকচক্ষুর আড়ালেই বিদায় নিলেন নাট্যাভিনেত্রী শাঁওলি মিত্র। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। বার্ধক্যজনিক কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। দুপুরে সিরিটি মহাশ্মশানে তাঁর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়। শেষ ইচ্ছাপত্রে শাঁওলি বলে গিয়েছিলেন, শেষকৃত্যের পরই যেন মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়।
রবিবার দুপুরে প্রয়াত হন শাঁওলি মিত্র। শেষবারের মতো পাশে ছিলেন কাছের মানুষজন। শম্ভু মিত্র আর তৃপ্তি মিত্রের মেয়ে রীতিমত শেষ ইচ্ছাপত্র রেখে গিয়েছিলেন। বাবা শম্ভু মিত্রের মতোই তিনি শেষযাত্রায় বাহুল্য় চাননি। তাই সৎকারের পর সাধারণ মানুষ জানতে পারলেন, তিনি চলে গিয়েছেন। বছর শুরুতে এমন নক্ষত্রপতনের অভিঘাত টেরই পেল না বঙ্গবাসী।
শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,''বাংলা নাট্যজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং প্রখ্যাত মঞ্চশিল্পী শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাভিভূত বোধ করছি। প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র বাংলা অভিনয় জগতে মহীরুহ ছিলেন। 'নাথবতী অনাথবৎ' বা 'কথা অমৃতসমান' এর মতো সৃষ্টিকর্ম বাংলার লোকমানসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।''
নন্দীগ্রাম পর্বে যে বিদ্বজ্জনেরা তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শাঁওলি। সে কথা স্মরণ করে মমতার স্মৃতিচারণা,''শাঁওলি মিত্র আমার বহুদিনের সহযোগী ছিলেন। সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তিনি আমার সঙ্গে একসাথে ছিলেন। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। পরে আমরা দায়িত্বে এলে কিছুদিন পর তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হন এবং দায়িত্বের সঙ্গে মূল্যবান কাজ করেন। বাংলার সরকার তাঁকে ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ ও ২০১৪ সালে দীনবন্ধু পুরস্কার দেয়।''
মুখ্যমন্ত্রীও দাহকার্যের পরই খবর পান। তাঁর কথায়,''শাঁওলিদির ইচ্ছাক্রমে তাঁর প্রয়াণের খবর আমাকে শেষকৃত্যের পর দেওয়া হয়। আমি কিন্তু কাছের মানুষ হিসাবে তাঁকে মনে ধরে রাখলাম। আমাদের বহুদিনের সহকর্মী এবং সুহৃদ হিসেবে তিনি আমাদের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন। আমি শাঁওলিদির পরিবার- পরিজন ও অগণিত গুণগ্রাহী কে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।''
শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেছেন, শাঁওলি মিত্র'র মৃত্যুসংবাদ আমাকে বড় হতবাক করলো। চেনা মানুষগুলো, যাঁদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, তাঁদের যেন হই রই করে বেঁচে থাকার কথা। কার যে গোপনে বয়স বাড়ে,কার যে অসুখ করে, জানা হয় না। ২০০৭ সালে আমাকে যখন কলকাতা থেকে বের করে দিয়ে দিল্লিতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল, ক'জন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, শাঁওলি মিত্র ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি আমাকে ফোন করতেন, মনে সাহস দিতেন। আমি চিরকালই তাঁর গুণমুগ্ধ।''