স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা কেন ভারতবর্ষে আসছে? এই প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের বলাগড়ের বিধায়ক, লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মুসলমানদের অত্যাচারের কারণে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে চলে আসছে, এটার মধ্যে সত্যতা কতখানি সেই প্রশ্নও তোলেন মনোরঞ্জন। এদিকে এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মনোরঞ্জনকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। নেটিজেনরাও একহাত নিয়েছে।
bangla.aajtak.in-এর বিশেষ অনুষ্ঠান 'ব্যক্তিগত'-র তৃতীয় এপিসোডে নাগরিকত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মনোরঞ্জন বলেন, 'মতুয়ারা এখন নাগরিকত্ব নিয়ে দাবিদাওয়া তুলছে। অথচ তাদের ভোটাধিকার রয়েছে, আধার, ভোটার কার্ড রয়েছে। তারা ভোট দেয়। তাহলে নতুন করে নাগরিকত্ব চেয়ে লাইন দেওয়ার কী আছে?'
মনোরঞ্জন তারপর বলেন, 'এখনও বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ এখানে আসছে। ৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। তার এতবছর পরও কেন সেখান থেকে হিন্দুরা ভারতে আসছে? এতদিন তো মুসলমানরা হিন্দুদের কোনও ক্ষতি করেনি। এতবছর পর হঠাৎ ক্ষতি করছে? হিন্দুদের এই অভিযোগের মধ্যে সত্যতা কতখানি?'
মনোরঞ্জনের দাবি, সাম্প্রতিককালে কলকাতা সংলগ্ন খুদিরাবাদে ৬০ থেকে ৭০ টা জনবসতি বা গ্রাম গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে অর্ধেক লোক বাংলাদেশ থেকে আসা। কিছু লোক বিহার থেকে এসেছে। তিনি সংযোজন করেন, 'আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, কেন বাংলাদেশ থেকে লোকগুলো আসছে। তাতে দেখলাম, একটা জমি চারজনের থেকে বায়না নিয়েছে। তারপর তিনজনকে ঠকিয়ে পালিয়ে এসেছে এখানে। কে কার বউ নিয়ে পালিয়ে এসেছে। অপকর্ম করে পালিয়ে এসেছে এখানে। মুসলমানের কারণে বা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে পালিয়ে এসেছে এমন একজন লোকও খুঁজে পাবেন না।'
এরপরই মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে প্রশ্ন করা হয়, 'তাহলে হিন্দুরা কি অত্যাচারিত হচ্ছে না বাংলাদেশে?' উত্তরে মনোরঞ্জন বলেন, 'হিন্দু হওয়ার জন্য কেউ অত্যাচারিত হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। হাসিনার পতনের পর হিন্দু ও মুসলিম উভয় অত্যাচারিত হয়েছে। হিন্দুরা বেশি হয়েছে। কারণ তারা বেশি সংখ্যক আওয়ামি লিগের সমর্থক ছিল। আমাদের রাজ্যেও তো মুসলমান মারা যায়। তাহলে কি আমি বলব যে ধর্মীয় কারণে মারা যাচ্ছে? বাস্তবে তো তারা দলীয় রাজনীতির কারণে মারা যাচ্ছে। হিন্দু হওয়ার জন্য অত্যাচার হচ্ছে এটা খুব বাজে কথা। বাংলাদেশের মুসলমানরা অত্যাচার করে না। আমিও তো ওখানে গিয়েছি। কিছু মনে হয়নি তো।'
এদিকে মনোরঞ্জনের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি রবিবারই মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে নিয়ে 'ব্যক্তিগত'-র তৃতীয় এপিসোড ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সোমবার বলেন, 'মনোরঞ্জন ব্যাপারী নিজেও বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। অথচ তিনি বলছেন, সেখানকার হিন্দুরা মুসমিলদের দ্বারা অত্যাচারিত নয়। তার কারণ তৃণমূলের লক্ষ্য এরাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করা। মনোরঞ্জনবাবু নিজে একজন লেখকও। তার সেই সত্ত্বা আর অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। আর এখানে বাংলাদেশিদের জনবসতি গড়ে ওঠার যে অভিযোগ উনি করছেন, সেটা সত্যি। তবে তারা হিন্দু নয়, রোহিঙ্গা। এটা সবাই জানে।'