পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব পদে সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল আজকেই। সোমবারই অবসর নেওয়ার কথা ছিল মনোজ পন্তের। তাঁর জায়গায় এবার কে হতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, সেই নিয়েই চলছিল জল্পনা। তবে সোমবার বিকেলে সব জল্পনার অবসান ঘটল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্তের মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর অনুমোদন দিল কেন্দ্র।
এক্সটেনশনের জন্য পন্তের নাম দিল্লিতে পাঠান হয়েছিল। নবান্ন থেকে পাঠানো প্রস্তাবে কেন্দ্র সাড়া দেওয়ায় তিনি ছয় মাস আরও মুখ্যসচিব পদে বহাল থাকছেন। সূত্রের খবর, প্রশাসনিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মনোজ পন্ত। তার আগে ওই পদে ছিলেন ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা। গোপালিকার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় অনুমোদন চেয়েছিল রাজ্য, কিন্তু তাতে সায় দেয়নি দিল্লি। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোজ পন্তকে মুখ্যসচিব হিসেবে বেছে নেন। সেই সময় তিনি অর্থসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি, সাময়িকভাবে সেচ দফতরের সচিব হিসেবেও তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁকে করা হয় মুখ্যসচিব।
১৯৯১ সালের এই আইএএস অফিসার আদতে উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। জিওলজিতে স্নাতকোত্তর। ১৯৯৩ সালে আইএএস হিসেবে প্রথম কাজ পূর্ব মেদিনীপুরে (তখন ছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর)। এসডিএম হিসেবে দায়িত্ব পান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব পান। মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার মতো দুই জেলার জেলাশাসকের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব পদে যোগ দেন। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এরপরে বিশ্বব্যাঙ্কের সদর কার্যালয় ওয়াশিংটনে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন। বছর তিনেক সেখানে ছিলেন। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন মনোজ পন্ত। জৈব প্রযুক্তি দফতরের যুগ্ম সচিব পদে যোগ দেন। সামলেছেন ভূমি দফতর। অর্থ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ছিলেন প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি। ২০২৪ সালের, ৩০ অগাস্ট তাঁকে সেচ দফতরের সচিব পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার একদিন পরই রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
তিনি এমন একটা সময়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব নেন, যখন এক সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে চলছিল রাজ্য। আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সময় অত্যন্ত প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন মনোজ পন্ত। ওবিসি মামলার ক্ষেত্রেও রাজ্যের হয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ওবিসি সার্টিফিকেট মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ভার্চুয়ালি হাজিরাও দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত। তাঁর এই ভূমিকা প্রশাসনে প্রশংসিতও হয়েছে। প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে এতদিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এসেছেন মনোজ পন্ত।