রোদে না বেরিয়েও জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন অনেকেই। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থদের এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। যেকারণে কলকাতার বহু বয়স্ককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অনেককে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন যে, এই ধরনের ডিহাইড্রেশন-জনিত অসুস্থতার একটি কারণ হল তাপমাত্রা বৃদ্ধি সত্ত্বেও তরল কম খাওয়া। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বা লিভারের রোগের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তরল খাওয়ার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারাই বেশি সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়াও, ডিমেনশিয়ার মতো পরিস্থিতিতে ভুগছেন এমন লোকেরা অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করেন, ডাক্তাররা বলেছেন।
গত ক'য়েকদিনে পঞ্চসায়রের একটি হাসপাতালের আইসিইউয়ে অন্তত দুই বয়স্ক মহিলাকে ভর্তি হতে হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসক জানিয়েছেন, গরম ও জলশূন্যতার কারণে তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন। একজন মহিলার বয়স ৯০ বছর। তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন এবং তাঁর জ্বর ছিল। তাঁর মূত্রনালীর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন ডিমেনশিয়ার কারণে তিনি মেপে জল খান। অন্য মহিলা, যার বয়স ৭৭। তিনি জ্বর এবং সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।
চিকিৎসকদের দাবি, রোদে বেরোতে হলে বা জল কম খাওয়া হলে যেমন ডিহাইড্রেশন হতে পারে, তেমনি বাড়িতে থাকলেও হতে পারে। বিশেষ করে এই প্রচণ্ড গরমে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি এবং লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কম জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রচণ্ড গরমে বিষয়টি জটিল হয়ে যায়।
মিন্টোপার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত কয়েকদিনে অনেক বয়স্ক মানুষ ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে এসেছিলেন। সকালে হাঁটার সময় তাঁরা ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হয়েছেন। ৬-৭ জন বয়স্ক লোক তাঁদের সকালে হাঁটার সময় মাথা ঘোরার অভিযোগ নিয়ে আসেন। তাদের ওআরএস দেওয়া হয়েছে এবং ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অনেককে ভর্তিও হতে হয়েছে। এছাড়াও শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে গরমে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন-
১. যাদের রোদে বেরোতে হয়, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘ সময় বা ভারী কাজ করা মানুষেরও সমস্যা। দুর্বল মানুষের জন্য খুব উচ্চ স্বাস্থ্য উদ্বেগ রয়েছে। যেমন শিশু, বয়স্ক, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
২. হিট ক্র্যাম্প, তাপ ফুসকুড়ি।
যা করবেন-
১. দুর্বল মানুষদের জন্য যত্ন প্রয়োজন।
২. সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ তাপের এক্সপোজার এবং বাইরের কাজ এড়িয়ে চলুন।
৩. হালকা রঙের, ঢিলেঢালা, সুতির কাপড় পরুন। মাথা ঢেকে রাখুন।
৪. জলশূন্যতা এড়াতে তৃষ্ণার্ত না হলেও পর্যাপ্ত জল পান করুন।
৫. ওআরএস ব্যবহার করুন, ঘরে তৈরি পানীয় যেমন লস্যি, তোরানি (ভাতের জল), লেবুর জল, ঘোল ইত্যাদি। যা শরীরকে রি-হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
৬. হিট স্ট্রোক, হিট র্যাশ বা হিট ক্র্যাম্প যেমন দুর্বলতার লক্ষণ চিনুন। মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘাম এবং খিঁচুনি। আপনি যদি অজ্ঞান বা অসুস্থ বোধ করেন, অবিলম্বে ডাক্তার/হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।