বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন করা চাকরিহারাদের একাংশকে শো কজ করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, গত ১৫ মে আন্দোলনের সময় কিছু চাকরিহারার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পাঠানো হয়েছে শো কজ চিঠি। চিহ্নিত আন্দোলনকারীদের সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি সম্পত্তিও নষ্ট হয় বলে অভিযোগ
পর্ষদের অভিযোগ, বিকাশ ভবনের সামনে যে আন্দোলন চলছিল, তা নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে সংঘটিত হয়। সেদিন বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে আন্দোলনকারীরা ভেতরে ঢুকে পড়েন, গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষদের আটকে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। সরকারি সম্পত্তিও নষ্ট হয় বলে অভিযোগ। রাতে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ মানুষদের বের করে আনা হয়। এই ঘটনাগুলির ভিডিও ও ছবি দেখে যাঁরা এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে শো কজ পাঠিয়েছে পর্ষদ।
শিক্ষা দফতরের অধীনে থাকা বিকাশ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থানে এই ধরনের অশান্তি এবং বেআইনি কার্যকলাপ প্রশাসনের কাছে গুরুতর বলে বিবেচিত হয়েছে। সেই কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে পর্ষদ।
বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ
SSC-র ২০১৬ সালের গ্র্যাজুয়েট এবং পাস প্যানেল নিয়ে আদালতের নির্দেশে রাজ্যে প্রায় ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তাঁরা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে পড়াতে পারবেন, তারপরে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেতে হবে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই শর্তে রাজি নন। তাঁদের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের দোষ নেই, তাই নতুন করে পরীক্ষা নয়। এর পাশাপাশি, তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই আদালতে রিভিউ পিটিশন দায়ের করেছে। এই দুই কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে আসেন।
১৫ মে সকাল থেকে বিকাশ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরাতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। একসময় আন্দোলনকারীদের একাংশ বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন এবং গেটে তালা লাগিয়ে দেন। ফলে বহু সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ আটকে পড়েন ভিতরে। রাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এখনও জমায়েত চলছে
এই ঘটনার পরে আন্দোলন পুরোপুরি থামেনি। এখনও বিকাশ ভবনের সামনে জমায়েত রয়েছে চাকরি খোয়ানো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাঁদের বক্তব্য, আইনি লড়াই চলবে, তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন।
এর মধ্যেই পর্ষদ শো কজ পাঠানো শুরু করায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার তাঁদের আছে, আর এই শো কজ় চিঠি আন্দোলন দমন করার কৌশল।
চাকরিহারাদের আন্দোলন নতুন মোড় নিচ্ছে। প্রশাসনের একাংশ যেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার তাগিদে ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেখানে আন্দোলনকারীরা নিজেদের বঞ্চনার অভিযোগ সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কী মোড় নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।