নির্বাচনের পরেই রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন হতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ভোটাভুটির পরে রাজ্যে ফের বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়। মোট ২৬৫ জন বিধায়ক ভোট দেন। তার মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১৯৬ জন এবং বিপক্ষে দেন ৮৯ জন। বর্তমানে দেশের মাত্র ৬টি রাজ্যে চালু রয়েছে বিধান পরিষদ। এক সময়ে বাংলাতেও ছিল বিধান পরিষদ। কিন্তু পরে তার অবলুপ্তি ঘটানো হয়।
কেন অবলুপ্তি হয়েছিল বিধান পরিষদের
সাধারণত বিধান পরিষদের মেয়াদ থাকে ৬ বছর। ১৯৬৯ সালে বিধান পরিষদের অবলুপ্তি ঘটনো হয়। এর জন্য মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন দুই জন। একজন কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এবং দ্বিতীয় জন আরএসপি নেতা যতীন চক্রবর্তী। সেই সময়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেস বাংলার সরকার গঠন করেছিল। বিধান পরিষদ অবলুপ্তির সেই সময়ে প্রথম প্রস্তাব এনেছিলেন যতীন চক্রবর্তী। যদিও যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তেহারে সেই সময়ে বিধান পরিষদ বিলুপ্ত ঘটনোর বিষয়টি ছিল। বিধান পরিষদ অবলুপ্তি ঘটানোর প্রস্তাব এনে যতীন চক্রবর্তী এর সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেন। বিধান পরিষদ সম্পর্কে যতীন চক্রবর্তী একে অপ্রয়োজনীয়, ব্যায়বহুল, বিলাসিতা এবং অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছিলেন। বিধানসভায় সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। বিধানসভায় কংগ্রেস ও যুক্তফ্রন্টের তৎকালীন ২২২ জন সদস্যই বিধান পরিষদ অবলুপ্তি পথে মত দেন। সেই সময়ে বিধান পরিষদ সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ একটি তথ্য সামনে এসেছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বাংলা বিধানসভায় মোট ৪৩৬টি বিল পাশ হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র দুটি সংশোধন করা হয়েছিল বিধান পরিষদে।
কী বলছেন এখন বিরোধী দলগুলি
বর্তমানে তৃণমূলের বিধান পরিষদের প্রস্তাবে তীব্র বিরোধিতা করেছে বিরোধীরা। যে ৬৯টি ভোট প্রস্তাবের বিপক্ষ পড়েছে তার মধ্যে ৬৮টি ভোট বিজেপি। আরেকটি ভোট আইএসএফ বিধায়কের। পরে শুভেন্দু অধিকারী জানান, 'তৃণমূলের যাঁরা হেরেছেন, তাঁদের পিছনের দরজা নিয়ে আনতে চাওয়া হচ্ছে। ওঁদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হেরেছেন। এমন অনেক উদাহরণ আছে। এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিরোধিতা আমরা করেছি।' অন্যদিকে বামেরাও বিরোধীতা করেছে বিধান পরিষদের। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, 'তৃণমূল সরকার সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে শাসকদলের কয়েকজনকে পিছনের দরজা দিয়ে পুনর্বাসন দিতে বিধান পরিষদ গঠনের নামে সাদা হাতি পোষার ব্যবস্থা করতে চাইছে, যার বিশাল খরচ জনগণের ঘাড়ে চাপবে। তাই আমরা বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি এবং এই পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।"