মা । প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এই ছোট্ট শব্দটির বিশাল তাৎপর্য। জন্ম থেকে শুরু। এরপর জীবনের নানা ওঠাপড়ায় মাকে ঠিক পাশে পাওয়া যায়। আনন্দ, দুঃখ, ছোট, বড় যে কোনও অনুভূতি খুব সহজেই যে মানুষটার সঙ্গে বিনা সংকোচে শেয়ার করা যায়, সে হল মা। এমন স্বার্থহীন সম্পর্ক বোধহয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই। এমনই এক নিঃস্বার্থ মায়ের কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরবো আমরা। যাঁর কথা বলছি তিনি আর পাঁচটা সাধারণ বধূর মতো তাঁর জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। হয়তো স্বপ্নও দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিধিলিপিতে অন্য কথা লিখে রেখেছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। আমরা বলছি রাজারহাটের বাসিন্দা নবনীতা সাহার কথা। মাধ্যমিক পাশ করে 2003 সালে পছন্দের মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন নবনীতা। কিন্তু যে মানুষটার উপর ভরসা করে জীবনের এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই মানুষটাই আজ যেন বড্ড অচেনা হয়ে উঠেছে নবনীতার জীবনে। স্বামীর সেরকম রোজগার নেই। জোটেনি স্বামী-শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসাও। এদিকে দুই সন্তানের জননী নবনীতা। সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে তাই সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন নবনীতা। প্রথমে একটি সাইকেল নিয়ে যুক্ত হয়েছিলেন একটি খাবার ডেলিভারি সংস্থার সঙ্গে। পরে একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে একটি স্কুটি কিনেছেন তিনি। এখন যদিও তিনি যাত্রী পরিবহণ করেন। রোজ সকালে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে অফিসে পৌঁছে দিতে হয় তাঁকে। সময় মতো অফিসে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদে অনেকদিনই সকালে খাবারের সময়ই জোটে না। আর ফিরতে ফিরতে সেই রাত একটা। অবশ্য প্রতিদিন সকালে উঠে রান্না বসিয়ে, ছেলে মেয়েদের স্কুলের জন্য তৈরি করে দিয়ে বেরোন তিনি। নবনীতা জানালেন প্রতিদিন রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করলে তাঁর আয় হল এক হাজার টাকা। কিন্তু রাত দশটার পর আরও দুটো বুকিং পেলে বাড়তি পাঁচশো টাকা আয় হয় তাঁর। তাই নিজের সংসার, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দিনে এই অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন নবনীতা। যদিও অবাক করা বিষয় হল এত পরিশ্রম করলেও স্বামীর কাছ থেকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি পান না নবনীতা। এতো গেল একজনের কাহিনী। এরকম হাজার হাজার নবনীতা রয়েছেন সারা দেশজুড়ে। যাঁরা হাসিমুখে প্রতিদিন পালন করেছেন সংসারের ভরণপোষণ।