বাঙালি বাড়িতে পাঁঠার মাংসের (Mutton) আলাদা রকমের কদর আছে। রবিবারের দুপুর, ছুটির দিন কিংবা কোনও উৎসবে পাঁঠার মাংস আর গরম ভাতের আমেজ একেবারে আলাদা। অনেকেই মনে করেন অতিথিদের মন জয় করার সহজ উপায় মাটন। কোলেস্টেরল, ডায়বেটিস, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি নানা রকম রোগের দাপট থাকলেও, প্রিয় পদের তালিকার অনেকেরই শীর্ষ স্থানে আসে এই মাংস (Meat)।
২৯ জুলাই ইদ-অল-আদাহ (Eid-al-Adha) অর্থাৎ কোরবানির ইদ (Qurbani eid) বা বকরি ইদ (Bakried)। এই উৎসবে মাটনের নানা পদ তৈরি করা হয়। বিরিয়ানি, কারি, কিমা, কাবাব, কোর্মা, টেংরি বা পায়া স্যুপ, গোস্তবা, রোগান জোশ ইত্যাদি মাটনের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি (Recipes) রয়েছে। আপনি কি জানেন কোন অংশ দিয়ে, কোন পদ রাঁধা হয়? মাটনের প্রতিটি টুকরো সঠিকভাবে চেনা জরুরি। কোন টুকরোটি আপনার রান্নার জন্য প্রয়োজন, তা জানতে রইল নানা টিপস।
* মগজ: পাঁঠার মগজ দিয়ে তৈরি রান্না দারুণ জনপ্রিয়। এটি দেখতে অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতো, রং হালকা গোলাপী। রান্নার পর এটি দেখতে অনেকটা ডিম ভুর্জির মতো লাগে। মানুষের চোখ, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী পাঁঠার এই অংশ।
* ঘাড়: পাঁঠার ঘাড়ও খাবারে ব্যবহৃত হয়। এই অংশের মাংস নরম এবং কম আঁশযুক্ত। তবে তুলনামূলক কম মসৃণ। পাঁঠার ঘাড়ের মাংস দিয়ে অনেক ধরণের খাবার তৈরি করতে পারেন তবে এটি স্টুর জন্য সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করা হয়। আপনার যদি হাড়সহ মাংস পছন্দ হয়, তাহলে মাটন বিরিয়ানিতে এই অংশ ব্যবহার করতে পারেন।
* কাঁধ: এই অংশটি নরম। পাঁঠার এই অংশ গ্রিল করে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তবে এটি কোর্মা এবং কিমার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এর সম্পূর্ণ অংশ ভুনা করে খাওয়া যায়।
* স্তন: পাঁঠার বুকের মাংস চর্বিযুক্ত, যা বিশেষভাবে সিদ্ধ করে তৈরি পদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি স্যুপের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাই কাশ্মীর অঞ্চলের জনপ্রিয় ক্যুইজিন গোস্তবা এই অংশের মাংস থেকে তৈরি করা হয়। বুকের মোটা অংশ বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা যায় এবং কোরমার জন্যও ব্যবহার করা যায়।
* পাঁজর: পাঁঠার এই অংশটির মাংস নরম এবং স্বাদযুক্ত। এতে হাড় থাকে এবং মাংসের মধ্যে মসৃণতা থাকে। যদিও বুকের মাংসের তুলনায় কম মসৃণ। এটি দিয়ে ভুনা করে খাওয়া ভাল। এছাড়াও এটি মাটন কোর্মা এবং বিরিয়ানিতেও ব্যবহৃত হয়।
* কটি: এই অংশটি পাঁজরের পরে এবং পায়ের সামনের অংশ। এটি হাড়সহ মাংসে পরিপূর্ণ। মাটন কারির জন্য এই মাংস সবচেয়ে ভাল। এই অংশ হাড় সহ বা ছাড়া রান্না করা যেতে পারে।
* রান: এটি ছাগলের পায়ের উপরের অংশের মাংস, যা খুব কম চর্বিযুক্ত এবং কোমল। এটি হাড়বিহীন মাংসের জন্য ব্যবহৃত হয়। পুরো রান তন্দুরে গ্রিল করা হয়। পকোড়া হিসাবে ব্যবহার করা হলেও, মূলত এটি কিমা এবং কাবাবের জন্য ব্যবহৃত হয়।
* পায়া: পায়া অর্থাৎ পা। এটি সম্পূর্ণ হাড়ের অংশ, যেখানে অস্থি মজ্জা খাওয়া থাকে। এটি গাঁট বা ত্বকের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। কারও হাড় ভেঙে যাওয়ার পরে টেংরি বা পায়া স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। শীতে মাটন পায়ার চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। মাটন নিহারিতে পায়াও দেওয়া হয়, যার কারণে স্বাদ খুব ভাল হয়।
* লিভার: ছাগলের যকৃৎ খুবই সুস্বাদু। এটি বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহৃত হয়। এটি গাঢ় লাল রঙের একটি মসৃণ অংশ এবং এতে হাড় বা মাংসের মতো কিছুই নেই।
* কিডনি: এই অংশ মসৃণতায় পূর্ণ। এর থেকে আলাদা করে অন্য কোনও খাবার তৈরি হয় না। যদিও এর মসৃণতা কাবাবে ব্যবহার করা হয়। কিডনি যদি রান্না করে লিভার দিয়ে খাওয়া হয়, তাহলে তাও ভুনা করে খাওয়া হয়।
* হৃদপিণ্ড: এই অংশে কোনও মেদ নেই, কিন্তু উপরের অংশে একটু চর্বি আছে। অনেকে হার্ট, ফুসফুস এবং তিল একসঙ্গে। খান। আবার কেউ কেউ লিভার এবং কিডনি দিয়ে কেবল হার্ট খান।